• শনিবার ১১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

  • || ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

প্রতিবন্ধী বাবার প্রতিবন্ধী মেয়ে জাহানারা পেলেন জিপিএ-৫

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২০  

প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যকে আটকে দিতে পারে না। আবার যদি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর কথা চিন্তা করি তবে অসাধ্য বলে পৃথিবীতে কিছুই নেই। জন্মগত ভাবেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহানারা। অক্ষমতাকে জয় করে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ ফাইভ। এমনকি তার বাবাও প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিবন্ধীর বাবার প্রতিবন্ধী মেয়ে এ সাফল্য এলাকায় ব্যাপক প্রসংশনীয় হয়েছে। 

 

অদম্য প্রতিভার অধিকারী সে। প্রতিবন্ধী হলেও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই অপ্রতিরোধ্য জাহানারা। ২০১৮ সালে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৩.৫০ পায় জাহানারা।

 

পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এসএসসি-তেও জিপিএ-৫ পেতে হবে, এটাই জাহানার  ইচ্ছে ও স্বপ্ন ছিল। তার এ স্বপ্নপূরণে কোনও বাধা থামাতে পারেনি। অসম্ভবকে সম্ভব করে মেধার স্বাক্ষর রেখে এবার  এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।  এ বছর ঘাটাইল এসই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়  থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। 

 

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহানারা টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া গ্রামের মো.জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। জাহাঙ্গীর আলমও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। জাহানারার আরো এক ভাই প্রতিবন্ধী  বিজয় ও তার ছোট বোন তানিয়া সেও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। 

 

 

জাহানারার মা বিনা বেগম বলেন, জাহানার জিপিএ-৫ পেয়েছে ঠিকই।  আমরা এতে সবাই খুশি। বাক ও শ্রবণ  প্রতিবন্ধীকতা  নিয়ে মেয়েটি সংগ্রাম  করে এতদূর এসেছে। তবে মেয়ের রেজাল্টে খুশি হলেও দুশ্চিন্তার  অন্তর নেই মা বীনার । কারণ মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে হলে ওকে কলেজে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে তেমন ভালো কলেজ বা লেখাপড়ার সুযোগ কম। 

 

তিনি আরো বলেন, একটি ভালো কলেজে দিতে গেলে সেখানে কাউকে রাখতে হবে। যেহেতু সে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী কথা বলতে পাওে না  তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। তাই কীভাবে মেয়েকে লেখাপড়া করাবেন এনিয়ে চিন্তিত তিনি। তবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করবেন বলে জানান মা বীনা বেগম।

 

২০০০ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি বীনা বেগমের  একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন। তখন থেকেই জাহানারা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। সামাজিক অনেক প্রতিকূলতাও মোকাবেলা করতে হয় তাদের। অভাবের সংসার। তারপরও বেড়ে ওঠা শিশুটির চাহনি, মেধা মা বিনার মনে সাহস যোগায়। মায়ের কাছে প্রথমে অক্ষর জ্ঞান নিতে থাকে জাহানারা। বাসা থেকে দূরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা সহজ ছিল না।  ঘাটাইল প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করা হয়। মা স্কুলের ক্লাসে বাচ্চাকে বসিয়ে দিয়ে নিজ  প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণিতেও ভালো রেজাল্ট করেছে।  লেখাপড়ার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে একই স্কুল থেকে পিএসসিতে  ২০১৮ সালে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৩.৫০ পায় জাহানারা। 

 

জাহানারার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও দিনমুজুরির কাজ করেন। ফলে দিনমুজুরির কাজ করে যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। এ অবস্থায়ও কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছেন প্রতিবন্ধী বাবা। 

 

বিনা বেগম জানান, মেয়ের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু শারীরিকভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় মেয়েকে বোঝানো হয়, এটা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। মেডিকেলে পড়তে গেলে ব্যবহারিক অনেক কাজ থাকে। তাই জাহানার  এখন লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হতে আগ্রহী। 

 

এ ব্যাপারে ঘাটাইল এসই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বুলবুলি বেগম ঘাটাইল টাইমসকে বলেন, প্রতিবন্ধী জাহানারা স্কুলে থাকাকালী আমরা তাকে অনেক সহযোগীতা করেছি। আমি জাহানারার মতো প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রতিবন্ধীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। জাহানারার সাফল্য তার কথা শ্রদ্ধায় ভরে স্মরণ করি। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর