• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বিমানের আদলে বাড়ি বানালেন প্রবাসী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৩  

অজপাড়াগাঁয়ে প্রায় ৩০ শতক জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল আকৃতির বিমান। চারপাশে গাছগাছালি। সবুজ ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিমানটিতে ওঠার জন্য রয়েছে দুটি দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। রয়েছে দরজা-জানালা। বিমানের চারপাশের খালি জায়গা হবে রানওয়ের মতো। বসানো হবে সিগন্যাল বাতিসহ সব ধরনের সরঞ্জাম। আলোকসজ্জাও থাকবে।

দূর থেকে কিংবা পাখির চোখে দেখলে মনে হবে লোকালয়ের ভেতর ছোট্ট একটি বিমানবন্দর, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিমান। বিমানবন্দর, রানওয়ে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও উড়াল দিতে পারবে না এই বিমানটি। কারণ উড়াল দেওয়ার জন্য নয়, বসবাসের জন্য এই বিমানটি তৈরি করেছেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

ইট-পাথর দিয়ে হুবহু বিমানের আদলে তৈরি এই বাড়িটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। এরইমধ্যে এই বাড়িটি ‘বিমান বাড়ি’ নামে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে।

কোনো প্রকৌশলী কিংবা নকশাকারী ছাড়াই নিজের একক পরিকল্পনায় বিমান বাড়িটি নির্মাণ করছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার পশ্চিম ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী জসিম উদ্দিন। এরইমধ্যে বিমানের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে রানওয়ে ও বিমানের ডানা নির্মাণের কাজ। আগামী বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জসিম উদ্দিনের বড় ভাই লোকমান উদ্দিন।

জসিম উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন জসিম উদ্দিন। বছরে দু’য়েকবার দেশে আসেন। যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা যাওয়া করতে করতে একসময় তার শখ হয় হুবহু বিমানের আদলে একটি বাড়ি বানানোর। শখ পূরণ করতে উদ্যোগ নেন জসিম উদ্দিন।

যৌথ পরিবারে নিজের ভাগের প্রায় ৩০ শতক জমির ওপর বিমানের আদলে বাড়িটি নির্মাণ শুরু করেন তিনি। নিজের পরিকল্পনা ও নকশায় প্রথমদিকে স্টিল দিয়ে বিমান নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু নকশায় ভুল হওয়ায় অর্ধেক কাজ করে ভেঙে দেন বিমানটি। পরে আবার নতুন করে কাজ শুরু করেন।

দ্বিতীয়বারের মত নকশায় ভুল হওয়ায় স্টিল দিয়ে বিমান নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। পরে ইট-পাথর দিয়ে ঢালাই করে বিমানের কাজ শুরু করেন। তৃতীয় দফায় আর নকশায় কোনো ভুল হয়নি। ইট পাথর দিয়েই বিমান নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ করেছেন জসিম উদ্দিন।

সরেজমিন বাড়িটি ঘুরে দেখা গেছে, বিমানটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিমানের ভেতরে চারটি রুম, একটি রান্নাঘর রয়েছে। বিমানে ওঠার জন্য দুইটি সিঁড়ি রয়েছে। দু’পাশে দুটি ডানা নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও দুটি আগমন ও বহিরগমন দরজা এবং দু’পাশে বেশকিছু জানালা রয়েছে। বিমানের চাকার বদলে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই পিলার। বিমানের পেছনে একটি ট্যাংক থেকে পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

বিমান বাড়িটির মালিক জসিম উদ্দিন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে নির্মাণাধীন বাড়িটি দেখতে এসেছিলেন।

জসিম উদ্দিনের বড় ভাই লোকমান উদ্দিন বলেন, আমার ভাইয়ের ছোটবেলা থেকেই শখ একটি বিমান বানিয়ে বিমানের ভেতরে থাকার। শখের বসেই এই বিমানটি বানাচ্ছেন। নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরো কিছু সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে স্টিল দিয়ে বিমান নির্মাণ কাজ শুরু করেন জসিম উদ্দিন। কিন্তু নিজের পছন্দ মতো না হওয়ায় অর্ধেক কাজ করে ভেঙে ফেলেন। পরে আবার কাজ শুরু করে নকশা ভুল হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতোও ভেঙে দেন। এরপর ইট-পাথর দিয়ে বিমান নির্মাণ শুরু করেন। মাঝখানে করোনার সময় কাজ বন্ধ ছিল। পরে আবার শুরু হয়েছে। আগামী বছর পুরো কাজ শেষ হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর