• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক সমুদ্র নামে ভিন্নধর্মী প্রদর্শনী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৩  

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জলজ প্রাণী, খাদ্য শৃঙ্খল ও মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী। তাই প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগণকে সচেতন করতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ নামে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনী চালু করা হয়েছে। 
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান সৈকতের সি গাল পয়েন্টে বেলুন উড়িয়ে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ নমুনা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সী গাল পয়েন্টে চার মাস ব্যাপী চলবে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ এর নমুনা প্রদর্শনী। ব্যবহার করা একটি খালি প্লাস্টিক বোতল মূল্য হিসেবে জমা দিয়ে প্রবেশ করা যাবে এই প্রদর্শনী দেখতে। 

সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে নীরবে-অগোচরে, অজান্তে প্লাস্টিক কীভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে।

প্রদর্শনীতে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‌‘মানুষের আবাসস্থল, সেটা হোক বাসাবাড়ি কিংবা আবাসিক হোটেল। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে ভূমিতে, জলাশয়ে বা সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যা জাহাজের মতো করে ভাসতে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, গাংচিল তাদের খাবার মনে করে তা গ্রহণ করে যা পরবর্তী সময়ে হজম হয় না। যার কারণে অকালে মারা যায় নিষ্পাপ প্রাণীগুলো। বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু ঘটে। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় যত্রতত্র প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানান, কক্সবাজারে শীত মৌসুমে সারাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসে। এই সময় পর্যটকরা যেন যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলেন এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল নিয়ে সচেতন হন, এ বিষয়ে সচেতন করতেই মূলত এই আয়োজন।  

কক্সবাজার সৈকতের বালির উপর নির্মিত হয় পাঁচটি ভাস্কর্য। যার মধ্যে রয়েছে বাড়ি, জাহাজ, কাছিম, সামুদ্রিক কোরাল ও গাংচিল। প্লাস্টিকের কারণে এসব প্রাণীর ভয়াবহ অবস্থা দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছে এবং সচেতন হবার প্রতিজ্ঞা করছেন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু হয়। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় আমাদের অসচেতনভাবে ফেলে দেওয়া যত্রতত্র প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের দেখানো চেষ্টা করা হয়েছে। প্লাস্টিক কিভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে। মূলত পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের সচেতন করতে এই আয়োজন করা হয়েছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যগুলোর খাল, নালা, নদী হয়ে সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে সমুদ্রে। প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপকরণের দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা, মাটির উর্বরতা হ্রাস, সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণীর জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে আরো বেশি সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেই ভিন্নধর্মী এই প্রদর্শনী।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর