• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ড্রেন তৈরির জন্য বলি ২৭৩টি গাছ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৪  

তীব্র খরতাপে অতিষ্ঠ মানুষদের প্রশান্তির পরশ দিত গাছগুলো। ৩৫-৪৫ বছর বা তারও বেশি বয়সী বড় বড় গাছগুলো ছিল মানুষের কাছে ছায়াবৃক্ষ। এইসব গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক, রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা একটু জিরিয়ে নিত। কিন্তু তীব্র এই খরতাপের মধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনূরা থেকে রাজশাহী গোদাগাড়ী সড়কের সদর উপজেলার অংশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুই শতাধিক ছায়া দানকারী এইসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত ১৫ দিনের মধ্যে কাটা হয়েছে এইসব গাছ। গাছগুলোর জন্য মানুষ দারুণভাবে মর্মাহত। মনে ক্ষোভ থাকলেও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে না বিপদে পড়ার ভয়ে। অন্যদিকে গাছগুলোর দাবিদার জেলা পরিষদ বলছে, সমস্ত বিধিমালা অনুসরণ করে ২৭৩টি গাছ দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এরমধ্য মরা, আধামরা, পরিপক্ক ও বিদ্যুতের লাইনের কাছে থাকা গাছ রয়েছে। জেলা পরিষদের একটি সূত্রমতে, এরমধ্যেই ঠিকাদাররা বেশির ভাগ গাছ কেটে নিয়ে, গাছের ভিটা ও ডালপালা সরিয়ে নিয়েছে। এলাকার অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কুল শিক্ষক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৩০-৩৫ বছর থেকে গাছগুলোকে ছায়া দিতে দেখে আসছি। গাছগুলোর অভাবে খাঁখাঁ করছে। পুড়ছে তীব্র খরতাপে। একেবারেই হঠাৎ করে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এ দৃশ্য মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় মানুষ। মনে ক্ষোভ নিয়েই আছে। কিন্তু বিপদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামছে না। কেননা প্রভাবশালী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের লোকজনের ভয়েই তারা কথা বলছেন না। রাস্তার পাশে বড় এক কড়াই গাছের নিচে নিচু টিনের ছাপড়া বাড়ি আমনূরা কুলিপাড়ার সারিউলের। চালের ওপর সুনিবিড় ছায়া থাকায় খরতাপে তেমন কষ্ট পেতে হয়নি বলে শুক্রবার দুপুরে জানান সারিউলের স্ত্রী। তিনি বলেন, ১০ দিন হলো গাছটি কেটে নেয়ার পর দুপুর বেলায় ভয়াবহ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঘর। ঘরে ঢোকায় যায় না। এতদিন গাছের ছায়ায় শান্তিতে ছিলাম। গরমের সময় এখন খুব কষ্টেই কাটবে। তবে ঝড় উঠলে ভয়ে থাকতাম, না জানি ডালপালা ভেঙে ঘরের উপর না পড়ে। আমনূরা ঝিলিম বাজারে রাস্তার পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্মাণ করছে ২৫০ মিটার পাকা ড্রেন। এজন্য মাত্র কয়েকটি গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ড্রেনের বিপরীত পাশে রাস্তার ওপারের গাছগুলো বা পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে কেন কাটার প্রয়োজন পড়লো জেলা পরিষদের, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ঝিলিম বাজারের দোকানদাররা। তারা জানান, গোটা বাজারটাই গাছের ছায়ার নিচে ছিল। এখানে রিকশা ও ভ্যানচালক এবং পথচারীরা এসে জিরিয়ে নিত। আর সেই অবস্থা নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদি খান বলেন, আমাদের ২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণের জন্য চার-পাঁচটি গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল। এজন্য পাঁচ-ছয় মাস আগে আমরা মৌখিকভাবে জেলা পরিষদকে জানিয়েছিলাম। গাছকাটা প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দীন বলেন, বন বিভাগকে জানিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে মূল্য নির্ধারণ কমিটির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করার পর গত ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ২৭৩টি গাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এটি অনুমোদিত হয়। ৩২ লাখ আট হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাছে সমস্ত বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া কোনো অতিরিক্ত গাছ কাটা হয়নি। তিনি বলেন, গাছগুলো ৪০-৫০ বছরের পরিপক্ব। পরে সেগুলোতে পচন ধরবে। তখন দাম পাওয়া যাবে না। এছাড়া বিক্রি করা গাছের মধ্যে মরা গাছ ও বিদ্যুতের লাইনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গাছও রয়েছে। খরতাপের কথা বিবেচনা করে আপাতত পাঁচ-ছয় দিন থেকে গাছ কাটা বন্ধও করা হয়েছে। অন্যদিকে এই গাছগুলোর মালিকানা দাবি করেছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (বিএমডিএ)। এ মর্মে বিএমডিএ জেলা পরিষদকে অতিসম্প্রতি একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মো. আফাজ উদ্দীন বলেন, মালিকানার পক্ষে বিএমডিএর কাছে কোনো প্রমাণ নেই। শিগগিরই তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর