• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

দেশের মানুষ নির্বাচন বানচাল করতে দেবে না

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩  

সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণ ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হয়েছে, সবাই আসুন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। নির্বাচনে জনগণের কাছে গিয়ে জনগণের ভোট চান। তবে বিএনপি এবং তাদের যে জোট আছে, তাদের শুধু  একটা কথা বলব, এই আগুন নিয়ে খেলা এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। অতীতে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, পারেনি। এটাও (দ্বাদশ নির্বাচন) তারা বানচাল করতে পারবে না।

শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ধন্যবাদ জানাই আমাদের নির্বাচন কমিশনকে। তারা অন্তত এই জ্বালাও পোড়াওয়ে ভীত না হয়ে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে সময়মতো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, আর আজকে যারা নির্বাচন বানচালের জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে এদের  ক্ষমা নেই। ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে, অস্ত্র হাতে নয়, রাতের অন্ধকারে নয়।

এ সময় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন নির্বাচন যেন যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য জনগণ ও দেশবাসীর সহযোগিতা আমি চাই। নির্বাচন করতে দেবে না বলে আগেও আগুন দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। আগুন নিয়ে খেলা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। দেশের মানুষ নির্বাচন বানচাল করতে দেবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৫টি উপ-কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ বাদে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা শ্রমিকদের জন্য কি করেছে, যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর এখানে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যে দলের নেতাই নেই, মু-ুহীন দল, মাথাই নাই। সে নেতা কখনোই আসবে না। আসার ইচ্ছা থাকলে চলে আসতে পারত। তার হুকুমে বাংলাদেশে যারা মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে তাদের ক্ষতি করছে। এ রকম একটা দায়িত্ব তারা নিচ্ছে কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন করতে চায় না, কারণ এটা মু-ুহীন একটা দল হয়ে গেছে। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচন করতে পারবে না। এ জন্য তারা নির্বাচন চায় না। চায় না বলেই নির্বাচন বানচাল করতে হবে। বানচাল করে তাদের লাভটা কি হবে? বাংলাদেশের মানুষের লাভটা কি হবে? তিনি বলেন, যারা এ ধরনের নেতৃত্বের হুকুমে মানুষের ক্ষতি করে তারা তো অভিশাপ পাবে, মানুষের অভিশাপে পড়বে। যে কয়টা মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার, তারা তো অভিশাপ দিচ্ছে, তাদের পরিবার দিচ্ছে। কারণ তাদের জীবন-জীবিকা, পোড়া ঘা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় কমিটির সদস্য সচিব ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।

সবাইকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই যে অপরাধ করেছেন জনগণের কাছে, বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি, অগ্নিসংযোগ করে জনগণকে হত্যা ও জানমালের ক্ষতি করেছেন, সে জন্য জাতির কাছে মাফ চেয়ে তারপর নির্বাচনে আসেন সেটাই আমরা চাই। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মক্ত। তিনি বলেন, নির্বাচন জনগণের অধিকার, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। সময় এসেছে নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দেবে। কারও যদি সাহস থাকে এসে ইলেকশন করবে। জনগণের ভোট পাওয়ার আস্থা থাকে তাহলে ভোট পাবে। জনগণ যাকে ভোটে নির্বাচিত করবে সেই সরকার গঠন করবে।

বিএনপি-জামায়াত জনগণের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে হামলা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা সাধারণ মানুষ হত্যা করার পরিকল্পনা করে তাদের মানুষ কেন ভোট দেবে? তাদের ওপর মানুষ কেন আস্থা রাখবে? আস্থা রাখে না। মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না, তারা ঘাতক চিহ্নিত। তারা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত। সেটা তো মাথায় রাখতে হবে।

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন-কারীদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা নির্বাচন বানচালের জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে এদের কিন্তু ক্ষমা নেই। বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা আছে জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, আমরা মানুষের সেবা করেছি বলেই আমাদের ওপর মানুষের সমর্থন আস্থা-বিশ্বাস রয়েছে। আজকে যদি সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয় কোন দলের ওপর তাদের আস্থা আছে, সেটা আওয়ামী লীগের ওপরেই আছে আমাদের ওপরই আছে। সে আস্থা বিশ্বাস ধরে রেখে আমাদের এগোতে হবে।

অতিবাম ও অতিডানপন্থিরা একাকার ॥ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অতিবামপন্থি ও অতিডানপন্থিরা মিশে একাকার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতটুকু বিচ্যুত হলো সেটাই প্রশ্ন। অতিবামদের আদর্শ নেই, তারা বলে, সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের অপরাধটা কী? আর বলে, নির্বাচন বানচাল করতে হবে। তার মানে হলো যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তার পর নিজেদের রাজনৈতিক নেতা বানানো, নির্বাচন নামে প্রহসন এইসব। তবে ভোট চুরি করলে এ দেশের মানুষ মেনে নেয় না। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের সচেতন করেছি।

জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। অথচ তাদের হাতে গড়া দলের কাছ থেকে শুনতে হয় নির্বাচনের কথা! বিএনপির আমলে যত নির্বাচন হয়েছে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি, ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল।

বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির পরে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলছে। বিএনপি ও তাদের জোটকে বলবো-আগুন নিয়ে খেলা বাংলাদেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, এটা তারা বানচাল করতে পারবে না। বাংলাদেশের নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণ তার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, যাকে দেবে তারাই সরকার গঠন করবে। মানুষকে গণতান্ত্রিক ধারা সম্পর্কে সচেতন আমরা করেছি।

নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনি আইনের বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে, অস্ত্র হাতে না, রাতের অন্ধকারে না। তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’-এ স্লোগান দিয়ে মানুষকে আমরা ভোট নিয়ে সচেতন করি। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করি। যে ক্ষমতা সেনানিবাসে বন্দি ছিল, সেটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেই।

টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূলের মানুষকে লক্ষ্য রেখেই করা। শুধু মুষ্টিমেয় লোক লাভবান হবে ক্ষমতায় এলে, যা স্বৈরশাসকরা করতো, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তারা কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করতো, হাতে সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ তুলে দিয়ে, তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করত। আমাদের সেটা ছিল না, আমাদের ছিল জনগণের ক্ষমতার ক্ষমতায়ন। তৃণমূলের মানুষ যাতে ক্ষমতা পায় তা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারাবাংলাদেশে সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। একটা দল টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর মানুষের বিশ্বাস-আস্থা অর্জন করা কঠিন। আমরা পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়ন করেছি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আজকে মানুষকে বিদেশি পুরনো কাপড় এনে পরাতে হয় না। দেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হয় না।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতিবাদ জানানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেসব দলের কাছে কোনও আওয়াজই পাচ্ছি না, কিছুই বলছে না। দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকে সেবা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মানুষের সেবা-অধিকার সুনিশ্চিত করেছি বলেই তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি। আজকে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে কোন দলের উপর তাদের আস্থা আছে? সেটা আওয়ামী লীগের উপরই আছে। এ আস্থা-বিশ্বাসটা ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে।

বাস, ট্রেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সরঞ্জামবহনকারী গাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এগুলো আমরা বরদাশত করব না। যেটা জনগণকে সহযোগিতা দিচ্ছে, জনগণ সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, এরা (বিএনপি) মানুষকে মানুষ মনে করে না। এখন নিজেরা লুকিয়ে থাকে, আমার কথা হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? একজন তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বয়স হয়ে গেছে, অসুস্থ।

এ সময় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি। সে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হয় তাহলে তাঁকে কোর্টে যেতে হবে। আমরা বলেছি কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিয়ে অনুমতি নিক। সেটা না করে ওইটা নিয়ে আবার আন্দোলনের চেষ্টা করে। আসলে এরা অসুস্থ্যতাকে ইস্যু হিসাবে দেখে। আদৌ যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতো তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হতো।

অসুস্থ মাকে দেখতে তার ছেলে আসে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে তো মাকে দেখতে এলোনা কোনোদিন! এত যায় যায় ও মরে মরে অবস্থার কথা শুনেও ছেলে আর আসে না। ছেলে আসবে কী করে? সে তো ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলায় আমাদের নেতা আইভি রহমানসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। অর্থ দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মামলা আমাদের না, আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলায় কানাডা থেকে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এদের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য এসেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর