• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি ॥ ৩শ’ আসনেই প্রার্থী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৩  

অবশেষে নির্বাচনী উৎসবের র‌্যালিতে যোগ দিচ্ছে জাতীয় পার্টি। গত দুই বছর ধরে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর জাতীয় পার্টি এবার এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দলটির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণার পর সব অনিশ্চয়তা ও সংশয় কেটে গেল। এই ঘোষণায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সত্যিকার অর্থেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর হচ্ছে। আর সত্যিকার অর্থেই অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের আবহ তৈরি হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না এই নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও জনগণের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ ছিল। গত নির্বাচনে দলটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছিল। জোটের অংশ হলেও জাতীয় সংসদে দলটি বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার পর দলটি নানা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করেছিল। এ বছর আলোচনায় ছিল জাতীয় পার্টি এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কারণ দলটির চেয়ারম্যান গোলাম কাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও গণমাধ্যমের কাছে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিলেন। বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গোলাম কাদের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি দলের স্বার্থে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন। এরই অংশ হিসেবে বুধবার দলটির মহাসচিবের ঘোষণার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল দলটি। জাপা মহাসচিব বলেছেন, দল নির্বাচনের আস্থার পরিবেশ চায়। ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব মাধ্যম থেকে জাতীয় পার্টি আশ্বস্ত হয়েছে- নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। ভোটাররা নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মহল আশ্বস্ত করেছে। তাদের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রেখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পার্টি চেয়ারম্যানের নির্দেশে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করছি। মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে। জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না, ৩০০ আসনেই নির্বাচন করবে । বুধবার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৪০০ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক আসনেই একাধিক আগ্রহী প্রার্থী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। এককভাবেই নির্বাচন করবে। জাতীয় পার্টি কারও সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাবে না। জাতীয় পার্টি স্বচ্ছ রাজনীতি করে। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপবাদ নেই।আমরা আশা করছি, ৩০০ আসনেই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার ফলে নির্বাচন নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কারণ এতদিন দলটি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না সেটি নিয়ে কিছুটা দ্বিধাবিভক্তি দেখা গিয়েছিল। আর সত্যিকার অর্থে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দাবিতে নির্বাচন বয়কট করে তবে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা দেবে। কারণ এবার দলটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে জোটের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলেও ২০১৪ সালের মতো বিনাভোটে নির্বাচনের ঘটনা ঘটবে না। ঘোষিত তফসিল অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর সংবিধান অনুসারে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের আইন বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার সংবিধান অনুসারেই নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু ও অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সর্বশেষ অন্যান্য প্রগতিশীল দলের মতো জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিল। দলটি বলছে, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির মতো কল্যাণ পার্টিও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার গোষণয় স্বস্তি ফিরল জনমনে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে এলে এখনো আইন অনুসারে নির্বাচনী তফসিল পেছানোর সুযোগ রয়েছে। বিগত সময়েও বিএনপির মতো দলগুলো দেরিতে নির্বাচনে আসায় নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগ পরবর্তীতে ফলপ্রসূও হয়েছিল।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর