• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

আলোর মিছিলে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৪  

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ৫৪তম গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গণহত্যার কালরাত্রি শীর্ষক সমাবেশ ও আলোর মিছিলের আয়োজন করে। এতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশি জনগণের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়। এ সময় ৫৪টি মশাল প্রজ্বালন করে মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানান।

সভার শুরুতে জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড ‘মুক্তির মন্দির ও সোপানো তলে’ গান পরিবেশন করে। কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সঞ্চালনায় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময় চৌধুরী। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। '৭১- এর গণহত্যা অস্বীকারকারী এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তির জন্য প্রস্তাবিত আইন দ্রুত কার্যকর করতে হবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণহত্যার কালরাত্রি পালনের এই সমাবেশ থেকে আমরা ঘোষণা করছি- আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে জঙ্গি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আজও গণহত্যার স্বীকৃতি আমরা পাইনি। তবে কূটনৈতিকভাবে সরকার তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে যে জেনোসাইড হয়েছে, সেটি বিশ্বে স্বীকৃতি পায়নি। এত খুন, ধর্ষণ হলো সবকিছু মিলিয়ে যে জাতিগোষ্ঠী নির্মূল করার অপচেষ্টা হয়েছে বিস্মতির অতল গহবর থেকে এটিকে তুলে আনতে হবে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকারকে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশিদের ওপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দিয়ে বৃটিশ মানবাধিকারকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, যদি সেসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকত। তাহলে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এটিকে আরও আগেই স্বীকৃতি দিত। যেমনটি আমরা গাজায় আরেকটি জেনোসাইড এখন দেখছি।

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ২৫ মার্চ যারা নিজের চোখে দেখেছে তারা জানে কী ভয়ঙ্কর ছিল। তখন আমরা বুঝতে পেরেছি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে প্রতি ২৫ জনে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই। এজন্য আমাদের প্রচার ও প্রসার আরও বাড়াতে হবে।

সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে বাংলাদেশে স্মরণকালের নিকৃষ্ট গণহত্যা চালানো হয়েছে আজকের এইদিনে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদসদস্য আরমা দত্ত, মাহবুবউদ্দিন বীরবিক্রম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল প্রমুখ।

এর আগে শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার-সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রি স্মরণে সোমবার ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। সভা শেষে জগন্নাথ হল গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়।

আলোচন সভায় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়া, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। সভার আগে গণহত্যার উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর