• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

অস্বাভাবিক হারে নামছে পানির স্তর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। আর এই তীব্র দাবদাহে রাজশাহীর তানোর ও বাঘা উপজেলার বেশকিছু গ্রামে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েলেও উঠছে না পানি। এ অবস্থায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট আরো গভীর আকার ধারণ করছে। ক্রমবর্ধমান হারে দিনদিন এই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট জটিল আকার ধারণ করছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানিসহ সেচের পানি নিয়ে দুর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, বৃষ্টির অভাবে বর্ষা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক না হওয়া ও নির্বিচারে পানি তোলায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা বেড়েছে। এতে কৃষিকাজ ও খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) তথ্য বলছে, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতিউচ্চ পানি সংকটাপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছে। গত গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণ (স্বাভাবিক) না হওয়ায় গড়ে এ অঞ্চলে চার ফুট করে নেমেছে পানির স্তর। সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা। গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। খাওয়ার পানি ছাড়াও কৃষিজমিতে সেচ এবং মাছচাষে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় ২০১০ সালে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ৫০ ফুট। ২০২১ সালে ভূগর্ভস্থ পানির গড় নিম্নস্তর আরো নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে। খরায় তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নে পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। এখানকার বাসিন্দারা প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন তাদের গৃহস্থালি কাজ ও খাওয়ার জন্য। একই চিত্র বাঘা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েলেও উঠছে না পানি। এসব গ্রামের মানুষকেও পানি সংগ্রহের জন্য ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে। এদিকে পানির অভাবে ও চৈত্রের খরতাপে কৃষিজমি ফেটে চৌচির। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর সবুর বলেন, খাবার পানি ও গৃহস্থালির কাজের জন্য পানি সংকট চরমে। ফসলের ফলন নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই। গত ১০ দিন ধরে পানি নিতে যেতে হচ্ছে পাশের গ্রামে। তানোরের মাহালিপাড়ার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম বলেন, আমাদের এখানে পানি পাওয়া যায় না। পাশে যাদের ডিপ (ডিপ টিউবওয়েল) আছে, ট্যাংক আছে তাদের কাছে থেকে খাবার পানি নিয়ে আসছি। প্রতিদিন সময় করে ৪-৫ বার পানি আনতে হচ্ছে। একই এলাকার ইদ্রিস আলী বলেন, তীব্র লোডশেডিং আর দাবদাহে ফসল নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই। পানি তো নেই-ই। আশপাশের ডিপ টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তাকিম বলেন, আমাদের এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনই খাবার পানির জন্য অন্য এলাকায় ছুটতে হচ্ছে। আসলে পানির স্তর আনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে আমাদের এখানে পানি উঠছে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড খরায় রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে দ্বিগুণ হারে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫-৪০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মাটির নিচে পানি থাকবে না। তিনি আরো বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের সব বিল খনন করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমবে। অধিক সেচনির্ভর বোরোর পরিবর্তে কম সেচের ফসল আবাদ করতে হবে। বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে, তাহলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টিপাত বাড়লে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর