• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

চিকিৎসা কেন্দ্রে নেই চিকিৎসক, ফার্মাসিস্টেই ভরসা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

দেশের পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া অতি প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলওয়ে জংশন। এ জংশনে রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনদের চিকিৎসা সেবা দিতে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এই চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে নেই কোনো চিকিৎসক। নামমাত্র একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে সপ্তাহে একদিন দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। তাছাড়া নেই প্রয়োজনীয় জনবল। ওষুধ সংকটের কারণেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নামকাওয়াস্তে চলছে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে এ কেন্দ্রেটিতে রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বৃহৎ রেলওয়ে জংশনে প্রকৌশল, লোকোশেড, ট্রাফিক ও বিদ্যুৎ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দিতে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এক সময় এ জংশনে সব মিলিয়ে ২ হাজার লোক ছিল। বর্তমানে এ জংশনে ৬ শতাধিক রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনসহ প্রায় আড়াই হাজার লোক রয়েছে। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক সময় জরুরি সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জনবল ছিল। রেলওয়ের লোকজন ভালো সেবা পেয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সেবার দরজা যেন এক প্রকার বন্ধ আছে। এখানে নেই কোনো চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১ দিন পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এই চিকিৎসা কেন্দ্রে বর্তমানে ২ জন ডাক্তারের স্থলে ১ জন রয়েছেন। তাও আবার তিনি রয়েছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে। কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটলে কিংবা কোনো বড় কর্মকর্তা এলে বা বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য থাকলে তিনি উপস্থিত থাকছেন। ২ জন ফার্মাসিস্টের জায়গায় ১ জন রয়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন থাকার কথা থাকলেও থাকছেন মাত্র ১ দিন। তাছাড়া ওয়ার্ড ডেন্টিস্ট ১ জন, ওয়ার্ডবয় ১ জন, মিডওয়াইফ ১ জন, ড্রেসার ১ জন, মেডিসিন কেরিয়ার ১ জন, ক্লিনার ১ জন, চৌকিদার ১ জন ও ১ জন আয়ার পদ শূন্য রয়েছে। একাধিক রেলওয়ের লোকজন জানান, এ জংশনে প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটাতে গিয়ে প্রতিদিনই কম বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন। আর লোকোশেডের কর্মীরা দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন উদ্ধার করতে গিয়ে হচ্ছে আঘাত পাচ্ছেন। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে কম বেশি আহত হন। ঐসব বিভাগগুলো যেখানে রয়েছে সেখানে কাটা ছেঁড়ার মতো ঘটনার কারণে তাদের চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি তাদের পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এ কেন্দ্রে দেওয়ার কথা। কিন্তু ডাক্তারসহ জনবলের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওয়ার্ড বয় (অবসরপ্রাপ্ত) অরুণ চন্দ্র মালাকার বলেন, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসহ অনেক পদ শূন্য হয়ে রয়েছে। চিকিৎসকের অভাবে রেলওয়ের লোকজনরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এখানে ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। ফামাসিস্ট যেই ওষুধ লিখে দিচ্ছেন সেটাই রোগীদের দেওয়া হয়। যদি নিয়মিত একজন চিকিৎসক থাকতেন তাহলে রোগীরা ভালো সেবা পেতেন। রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের মিন্টু কুমার দাস বলেন, এটা নামেই মাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো চিকিৎসক। শুধু একজন ফামাসিস্ট রয়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১ দিন আসেন। আখাউড়া থেকে তিনি শায়েস্তাগঞ্জে বেশি সময় দেন। এত বড় জংশনে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কোনো সমস্যা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। রতন কুমার বলেন, ডাক্তারের কথা শুনেছি যে একজন আছেন। কিন্তু সেবা নেয়ার ভাগ্য হয়নি। তাকে কখনো দেখিনি। ফার্মাসিস্টের জন্য সবসময় আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। তবে যখন প্রয়োজন তখন পাওয়া যায় না। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মচারীর স্ত্রী রোগী রেহেনা বেগম বলেন, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ছিল চিকিৎসার প্রধান ভরসা। কিন্তু অনেক দিন ধরে ডাক্তার না থাকায় এখানে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। চিকিৎসার প্রয়োজন হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে। শ্রমিক নেতা মো. বেলাল হোসেন বলেন, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী ও তাদের পরিবারের চিকিৎসার একমাত্র জায়গা ছিল। এখানে কোনো চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট মো. শাহ আলম বলেন, ডাক্তার, ফার্মাসিস্টসহ অন্যান্য জনবল অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। প্রতি সোমবার একজন ফার্মাসিস্ট এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন। ঐ সময় ৫০-৬০ জন চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। অন্য সময় রেলওয়ের অসুস্থ লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। বন্ধের দিন ছাড়া বাকি সময় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমাকেই বসে থাকতে হয়। আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ফার্মাসিস্ট সপ্তাহে ৩-৪ দিন থাকার কথা থাকলেও তিনি থাকছেন ১ দিন। আমাদের কোনো সদস্য কিংবা কোনো যাত্রী অসুস্থ হলে এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এখানে চিকিৎসক থাকলে কষ্ট করে সেখানে যেতে হতো না। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট সাদিকা ইয়াসমিন বলেন, আখাউড়া এবং শায়েস্তাগঞ্জ এই দুই জায়গাতে দায়িত্ব পালন করছি। এর মধ্যে সপ্তাহে আখাউড়ায় ৩ দিন চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভালো রোগী দেখা হয়। এখানে ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। তিনি আরো বলেন, এই কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসহ অন্যান্য বেশ জনবলের সমস্যা রয়েছে। সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করছি তাদের সেবা দিতে। ডাক্তারসহ জনবল দেওয়া হলে এ সমস্যা থাকবে না।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর