• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে মুকুল, ঝরছে গুটি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

দিনাজপুরে প্রচণ্ড গরম আর খরায় ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। এতে দিশেহারা চাষিরা। কোনোভাবেই গুটি ঝরে পড়া ঠেকাতে পারছেন না তারা। এতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়ার প্রতিকূল এ অবস্থা চলতে থাকলে ফলন অর্ধেকে নেমে যেতে পারে। তবে পরিস্থিততি মোকাবিলা করে লিচু রক্ষায় চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দিনাজপুরে লিচু চাষে জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ৪৮৯ হেক্টর। জেলায় লিচু বাগানের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। জেলার ১৩ উপজেলায় লিচু চাষ হলেও সদর ও বিরল উপজেলার লিচুই সেরা। সবচেয়ে বেশি আবাদও হয় বিরল উপজেলায়। শুধুমাত্র বিরল উপজেলাতেই আড়াই হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। বিরলে ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। চলতি বছরে দিনাজপুরে মৌসুমের শুরুতে চমৎকার ও উপযোগী আবহাওয়া থাকায় লিচু বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুলের সমারোহ ঘটে। চৈত্র মাসের শেষদিকে গাছগুলিতে গুটি আসতে শুরু করে। কিন্তু বৈশাখের শুরু থেকে অব্যাহত দাবদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে পুড়ে যাচ্ছে গাছের মুকুল। ঝরে পড়ছে নতুন গুটি, শুকিয়ে যাচ্ছে গুটির বোটা। এতে প্রথম অবস্থায় গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে বেশ আশান্বিত হলেও এখন লিচুর ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনাজপুরের লিচু চাষিরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন, আবহাওয়া বিবেচনায় কোনো অবস্থাতেই দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেশি থাকা অবস্থায় গাছে পানি দেওয়া বা স্প্রে করা যাবে না। সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমে গেলে গাছে স্প্রে করে পানি ছিটাতে হবে, কীটনাশক দিতে হবে। সেইসঙ্গে কিছু অনুখাদ্য দিলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। সদর উপজেলার মাসিমপুরসহ বিরল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা লিচু রক্ষায় বাগানে সেচ ও গাছের পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ লিচু রক্ষার জন্য গাছে কীটনাশক ও বিভিন্ন অনুখাদ্য প্রয়োগ করছেন। সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচু চাষি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, তার বেশ কয়েকটি বাগানে শতাধিক লিচুর গাছ রয়েছে। প্রথম অবস্থায় আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রায় প্রতিটি গাছেই ব্যাপক মুকুল আসায় এবার লিচু নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন তিনি। কিন্তু গুটি আসা শুরু হওয়ার পর দাবদাহ আর গরমের কারণে পুড়ে গেছে গাছের অনেক মুকুল এবং ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। এ অবস্থায় ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের লিচু চাষি মতিউর রহমান বলেন, শুরুতে আবহাওয়া ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে আবহাওয়া তাতে লিচুর অবস্থা গতবারের চেয়েও বেশি খারাপ হতে পারে। একই উপজেলার বহবলডিঘী এলাকার লিচু চাষি কারিমুল ইসলাম জানান, রোদের কারণে গুটি শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে, বোটা শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার গাছের গোড়ায় পানি দিলে নিচের মাটিও গরম হয়ে যাচ্ছে। কি হবে জানি না। একমাত্র আল্লাহই রক্ষা করতে পারেন। বিরল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে মুকুল ও গুটি ঝরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফলন অর্ধেকে নেমে যেতে পারে। তবে পরিস্তিতি মোকাবিলায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারা যদি পরামর্শ মেনে সঠিকভাবে সেচ দেয়, সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগ করে তাহলে এই লিচুকে আমরা হারভেস্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারব এবং আমরা পর্যাপ্ত ফলন পাব। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত কয়েকদিন থেকে দিনাজপুরে মৃদু ও মাঝারী দাবদাহ বিরাজ করছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর