• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

রেলপথের সুফল পেতে যাচ্ছে বরিশাল বিভাগ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৪  

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রেলপথের সুফল পেতে যাচ্ছে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। পদ্মাসেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলকে রেলেযুক্ত করার কাজ চলছে পুরোদমে। তবে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা রুটে থাকছে ১২টি রেলওয়ে স্টেশন। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ভরতকাঠি গ্রামে ইলিশ মাছের আদলে দৃষ্টিনন্দন নকশায় এখানকার একমাত্র রেলওয়ে স্টেশনটি হবে। এরই মধ্যে স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ চলমান আছে। এর ধারাবাহিকতায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ভাঙ্গা থেকে বরিশাল এবং পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলের জন্য বিশদ নকশা এবং টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুতির পাশাপাশি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ম্যাপ চূড়ান্ত করে অনেক আগেই তিনটি সার্ভে কোম্পানি জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছে। ম্যাপ অনুযায়ী মাটি পরীক্ষা, জমি, ঘরবাড়ি, স্থাপনা এবং গাছপালার জরিপকাজও সম্পন্ন হয়েছে। ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা বন্দর-কুয়াকাটা রেললাইন প্রকল্পটির বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণকাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন হলে ২০২৮ সালে এ রুটে ট্রেন চালু করতে আশাবাদী রেলপথ বিভাগ। বরিশাল ও পটুয়াখালী দুই জেলার মাঝে শুধুমাত্র ট্রেন থামবে নলছিটির ভরতকাঠিতে। এই রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঝালকাঠির মানুষ রাজধানী ঢাকায় ও পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর এবং পর্যটননগরী সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় যাতায়াত করতে পারবেন। ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি সত্যবান সেনগুপ্ত গোপাল বলেন, এ অঞ্চলে রেলপথ তৈরি হলে ট্রেনে যাতায়াতে দখিনা জনপদের মানুষ বাসের যাত্রী হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি ভ্রমণে ব্যয় কমবে। একাধিক কারিগরি বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল সেকশনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন করে ট্রেন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। জানা গেছে, এই রেলপথ নির্মাণে পাঁচ হাজার ৬৩৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিছু জায়গায় জটিলতা থাকায় ভূমি অধিগ্রহণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের জটিলতা থাকলে ৪১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিলম্বিত হতে পারে। বিলম্ব যত হবে এ প্রকল্পের ব্যয় ততই বাড়বে। ডেভলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টসের জুনিয়র কনসালট্যান্ট আহসান আলী জহির বলেন, ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত ২১১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে, যে রেলপথ ৩২৮ ফুট প্রশস্ত জায়গার মাঝখান দিয়ে নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে রেলপথটি হবে সিঙ্গেল লেনের, তবে ৩২৮ ফুট বা ১০০ মিটার প্রশস্ত জায়গা থাকায় পরবর্তী সময়ে এখানে ডাবল লেনের রেলপথ তৈরি করা যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। তিনি আরো বলেন, ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেলপথটি বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ ছয়টি জেলার মধ্য দিয়ে যাবে। এখানে থাকবে ১২টি প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এর মধ্যে শুধু বরিশাল নগরসহ জেলায় থাকবে তিনটি। এর মধ্যে একটি বরিশাল এয়ারপোর্ট এলাকায়, একটি বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর এলাকায় এবং অপরটি বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। এ কর্মকর্তা আরো জানান, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় আরো একটি স্টেশন থাকবে। যদিও ১২টি প্রধান স্টেশনের বাইরে আরো কিছু সাব স্টেশন থাকবে। পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে প্রধান স্টেশনের সংখ্যা আরো সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আখতারুজ্জামান জানান, রেলপথ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আলাদাভাবে মতবিনিময় করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ, মাঠপর্যায়ে জরিপ ও সব আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষে দরপত্র আহ্বান করা হবে। আখতারুজ্জামানের বলেন, এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তবে রেলপথ নির্মাণের জন্য এখনো দুটি স্টাডি বাকি আছে, যা রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ তিনটি দেশি ও বিদেশি সহযোগী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে। সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রকল্প বাস্তবায়নে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর