• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

‘সাইলেন্ট কিলার’ পার্থেনিয়ামের ভয়ঙ্কর বিস্তার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৪  

চুয়াডাঙ্গায় রাস্তার দুই ধারে, ফসলের ক্ষেতের পাশে সবুজ ঝোপ। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হবে সবুজের সমারোহ। এই সবুজের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর আগাছা পার্থেনিয়াম। বি‌শেষ ক‌রে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগু‌লো‌তে কয়েক বছর ধরে রাস্তার দু-ধারে, ক্ষেতের আইলে দেখা যাচ্ছে এই গাছটি। বিষাক্ত এই গাছ থেকে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ। এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। স্থানীয় মানুষ একে ঝাও ফুল আবার গাঁজার গাছ বলেও চেনেন। গাছগুলো সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা। ছোট ছোট ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। যে গাছটি মানুষ, গবাদি পশু ও ফসলের ক্ষতি করতে পারে। অথচ এই আগাছা সর্ম্পকে স্থানীয় মানুষ কিংবা কৃষকদের বিশেষ কোনো ধারণা নেই। চুয়াডাঙ্গার সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা এই চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের ক্ষেতে আইলে ও কাঁচা-পাকা রাস্তার দুইধারে শোভা ছড়াচ্ছে বিষাক্ত এই পার্থেনিয়াম গাছ। সাদা ফুল ফুটে থাকা গাছটি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। গ্রামের কেউ কেউ রাস্তার ধারে পার্থেনিয়াম গাছের মধ্যেই ছাগল গরু চরাচ্ছেন (ঘাস খাওয়াচ্ছে)। আবার কৃষকরা ধানের আইলে গাছটি কেটে দেওয়ার পরও আরো বেশি সতেজ হয়ে বেড়ে উঠছে। অনেকেই রাস্তায় থাকা আগাছা ভেবে পরিষ্কার করছে অসচেতনভাবে। তারা জানে না ক্ষতিকর পার্থেনিয়াম সম্পর্কে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, পার্থেনিয়াম একটি উদ্ভিদ জাতীয় গাছ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এটি বাঁচতে সক্ষম। বিশেষ করে ফসলের ক্ষেত কিংবা রাস্তার দুই ধারে এ আগাছাটি বেশি জন্মে। বেঁচে থাকতে কোনো ধরনের যত্ন-আত্তির প্রয়োজন পড়ে না। খুব সহজেই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এটি উপমহাদেশীয় অঞ্চলের নিজস্ব উদ্ভিদ নয়। প্রতিবেশী দেশ থেকে দানাদার খাদ্য কিংবা গরুর খুরের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এটি বেশি নজরে পড়ে সীমান্তবর্তী জেলার রাস্তার দুই ধারে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলাতে রাস্তার দু-ধারে এবং ফসলের ক্ষেতেও ছড়িয়ে গেছে। গাছটির আয়ুষ্কাল মাত্র তিন-চার মাস। এ আয়ুষ্কালের মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল সাধারণত গোলাকার, সাদা ও পিচ্ছিল হয়। এ গাছ তিন-চার মাসের মধ্যে ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজ জন্ম দিতে সক্ষম। দামুড়হুদা উপজেলার খাঁনপাড়া গ্রামের কৃষক জামির হোসেন বলেন, এই আগাছাটির নাম, গাছটি ক্ষতিকর কিনা তা আগে কখনো শুনিনি। তবে বিভিন্ন ফসলের আইলে, রাস্তার দুই ধারে প্রচুর জন্ম নেয়। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি গাছটি খুবই ক্ষতিকর, ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। গাছটির বিষয়ে সরকারের এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানা এলাকার কৃষক আবু সাইদ বলেন, মাত্র ৬-৭ বছর হলো এই গাছ দেখা যাচ্ছে। লোকমুখে শুনেছি, এই পার্থেনিয়াম গাছটি খুবই বিষাক্ত এবং ক্যান্সারের জীবাণু বহন করে। কেটে ফেললেও আবারো সেখান থেকে নতুন করে জন্ম নেয়। বিষয়টি জানার পর আমি নিজের জমির আইল থেকে গাছগুলো কেটে ফেলেছি। তবে এই গাছ সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। কৃষক ওয়াশিম বলেন, ইউটিউব থেকে জানতে পেরেছি এই গাছটি মানুষ এবং গরু-ছাগলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পার্থেনিয়াম গাছ শরীরে লাগলে প্রচুর চুলকায়, লাল এবং ফুলে যায়। গত ৬-৭ বছর হলো এই গাছটি এলাকায় দেখা মিলেছে। গাছটি প্রচুর পরিমাণে জন্ম নেয়, ফলে রাস্তার দুই ধারে ফসলের মাঠে প্রচুর দেখা যাচ্ছে। ফসলের ক্ষতি হয় কিনা তা এখনো জানি না। তবে ঘাসপোড়া ওষুধ দিয়েও গাছটি মারা সম্ভব হয় না। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শার‌মিন আক্তার বলেন, পার্থেনিয়াম গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। মানবদেহ এবং গবাদি পশুর জন্য এই উদ্ভিদ খুবই বিপদজনক। পার্থেনিয়াম গাছে হাজার হাজার ফুল থাকে। যে কারণে পরাগ রেনু যদি বাতাসের মাধ্যমে মানুষ অথবা কোনো প্রাণীর শরীরে পড়ে সেখানে চর্মসহ নানা রোগ হতে পারে। এটির বীজ বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। সেকারণে এই আগাছাটি খুব দ্রুতই বংশবিস্তার করতে পারে। আগাছাটি কেটে পুড়িয়ে না ফেললে আবারো বংশ বিস্তার করতে পারে। তিনি আরো বলেন, আগাছাটি মানুষের হাত-পায়ে লাগলে জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যায়। আক্রান্ত মানুষটি ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকেন। এটি শুধু বিষাক্তই নয়, যেকোনো ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও করে। এই আগাছা থে‌কে ক্যান্সার হয় কি না সেটা আমার জানা‌ নেই। আগাছা‌টা নি‌য়ে গ‌বেষণা চল‌ছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, পার্থেনিয়াম আমাদের দেশীয় আগাছা না। এটা পাশ্ববর্তী দেশ থে‌কে এসেছে। ত‌বে এর ক্ষ‌তিকারক দিক সম্প‌র্কে আমার কোনো ধারণা নেই। এটা আমা‌দের গ‌বেষকরা বল‌তে পার‌বেন। এটা নি‌য়ে গ‌বেষণা চল‌ছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর