• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ধুনটে মাছ রক্ষার জালে বিপন্ন পাখি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

মাছ রক্ষায় পুকুরের উপরে টাঙানো হয়েছে জাল। আর সেই জালই হয়েছে পাখির মরণফাঁদ। মাছ খাওয়ার লোভে জালের ফাঁদে আটকে মরছে পাখি। পুকুরের উপরে জাল লাগানোয় মাছ বাঁচছে। টাকা আসছে। তাই পানকৌড়ি মরল আর মাছরাঙার ডানা ছিঁড়ল, দেখার সময় নেই মাছ চাষীদের। পাখি নিধনের এমন চিত্র বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পুকুর কিংবা জলাশয়ে।

 

জানা গেছে, মাছ চাষ বর্তমানে লাভজনক পেশা। বেকার যুবকেরা ঝুকে পড়েছেন মাছ চাষের দিকে। তাই মাছ চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। লাভের অঙ্কটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে এরই মাঝে মাছ চাষীরা করছেন বড় ভুল। জলাশয় কিংবা পুকুরের মাছ সংরক্ষণের তাগিদে পাখির আক্রমণ থেকে বাঁচাতে চাষীরা ব্যবহার করছেন ফাঁদ জাল। ফলে মাছ খেতে গিয়ে সেই ফাঁদে আটকে পড়ে মারা যাচ্ছে পাখি।

 

আগে পাখি তাড়াতে পুকুরের ধারে কাকতাড়ুয়া দেখা যেত। পুকুরে খুঁটি পুঁতে তাতে ফিতে টানিয়ে দেওয়ায় বাতাসে ফিতার পতপত শব্দে পাখি আসতো না। অথবা টিনে শব্দের ব্যবস্থা করা হতো, শব্দে ভীত হয়ে পাখি আসতো না। কিন্তু এখন জলাশয়ের উপর দিক ঘিরে রাখা হয় জাল-সুতোয়। যাতে মাছ খেতে মাছরাঙা, পানকৌড়ি বা বক নামতে না-পারে। তারপরও খাবারের খোঁজে এসে কত মাছরাঙা-পানকৌড়ির যে ওই জাল-সুতোয় আটকে প্রাণ যাচ্ছে তার হিসেব নেই। বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপেরও দাবি তুলেছেন তারা।    

 

এ উপজেলার একাধিক পুকুর মালিক জানান, প্রতি বছর পুকুরে অনেক টাকার মাছ ছাড়ি। কিন্তু পাখিতে খেয়ে নেয়। বছর শেষে কিছুই লাভ দেখতে পাই না। তাই পুকুর জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তবে মাছ রক্ষার জালে পাখি আটকে মারা যাচ্ছে এমন প্রশ্নেনের জবাবে পুকুর-মালিকেরা কোন কথা বলেননি।

 

জীববৈচিত্র ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কাজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন জীবনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাছিম বলেন, পুকুরে জাল বিছিয়ে পাখিদের মরণফাঁদে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। মাছরাঙা বা পানকৌড়ির মতো পাখি শুধু মাছ খায় না, পুকুরের অনেক পোকামাকড়ও খায়। তাতে মাছ চাষেরই উপকার হয়। পুকুরে পাখির উপদ্রব ঠেকাতে জালের পরিবর্তে অন্য উপায়ের কথা ভাবতে হবে। মাছ রক্ষা করতে গিয়ে এভাবে পাখি নিধন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

 

ধুনট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মীর্জা ওমর ফারুক বলেন, পুকুরে যেন কোন গাছের লতাপাতা ঝরে না পড়ে এ জন্য জালের ব্যবহার করতে পারেন। কিন্ত জালে আটকে পাখি মরার কোন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে এ ধরণের ঘটনার হয়ে থাকলে মাছচাষীদের সচেতনতার ব্যবস্থা করা হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর