• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

কিসের সংলাপ! ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৩  

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস বন্ধের জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আশা করব, তারা (বিএনপি) এগুলো বন্ধ করবে। না করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ২০১৩ সালে পারেনি, ২০১৮ সালে পারেনি, এবারও পারবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। তারা তো চাচ্ছে এটাই (নির্বাচন বানচাল)। তারা তা পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। এটা তারা ভুলে যায়।

বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে দেশবাসীকে আগুন সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের যেভাবে শিক্ষা দিতে হয় সেই শিক্ষাটা দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেই শিক্ষাই আমরা দেব। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা হবে না। নির্বাচন যথাসময়েই হবে, কে চোখ রাঙাল, কে বাঁকাল- তার পরোয়া আমরা করি না, কারও চোখ রাঙানিতে নির্বাচন বন্ধও হবে না। বিএনপি নির্বাচন চায় না, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা পুনরায় নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি- জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম সুযোগ, সেটাও তারা (বিএনপি) হারিয়েছে।
গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগদান উপলক্ষে সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তিনদিনের সরকারি সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আগুন সন্ত্রাসীদের ধরে দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগেও তারা যখন করেছে তখনও জনগণ ঠেকিয়েছে। এবারও জনগণ ঠেকাবে।

২৮ অক্টোবরের ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। আর যারা আগুন সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে। আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যার গাড়ি যখন পোড়াবে আর যে ধরা পড়বে, তার হাতও ওই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে। অগ্নিসন্ত্রাসীদের দ্রুত সাজা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। 
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বেলজিয়াম সফরে অর্জিত সাফল্যগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন। এরপর প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের হাসিমুখে উত্তর দেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুূল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। 
সংবাদ সম্মেলন শেষে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের নামে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস, এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন স্থানের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের একটি ভিডিওচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়। 
খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করব? বিরোধী দল কোনটা? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধী দল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করব? খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ?
সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? বরং সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে সংলাপ করুক। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি- জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম সুযোগ, সেটাও তারা (বিএনপি) হারিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, যখন উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল, তারা তার বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হলো, তখন কেন বিচারের দাবি করে না? যারা সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলে, আজকে যখন এত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হলো, তারা চুপ কেন? তিনি বলেন, আমাদের তো মেরেছেই, এই পুলিশকে পিটিয়ে মারল। ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে বাইডেন কী সংলাপ করছেন? ট্রাম্প-বাইডেনের সংলাপের দিন আমরাও সংলাপ করব। 
যথাসময়ে নির্বাচন, কারও চোখ রাঙানির পরোয়া করি না ॥ সময় মতো নির্বাচন হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কথা একটাইÑ নির্বাচন হবে এবং যথাসময়ে হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল- ওটা নিয়ে আমরা পরোয়া করি না। কারোর চোখ রাঙানিতে নির্বাচন থেমে থাকবে না। এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- করে তারা (বিএনপি-জামায়াত) নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। 
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন,  কে কে চোখ রাঙাল, বা কে কী বলল, এসব তো আছেই। এটা আপনারা বোঝেন না? যারা খুন করার পরেও বলে ডায়ালগ করতে হবে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? খুনির সঙ্গে কিসের কথা? এ ধরনের কথা বলে কী করে? তারা (বিএনপি) যেসব কর্মকাণ্ড করেছে আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। তারা এটা করবে এজন্য তাদের প্রস্তুতি ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রাম করে ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেই আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আর  গণতন্ত্র থাকলে নির্বাচিত সরকার থাকলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে যে উন্নতি হয় সেটা আপনারা দেখেছেন। শুধু ঢাকায় মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে নয় পরিবর্তনটা আমরা সারাদেশের তৃণমূল থেকে করেছি। 
বিএনপি যে সন্ত্রাসী দল, আবারও তা প্রমাণ হলো ॥ ২৮ অক্টোবরের ব্যাপক সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতার মাধ্যমে বিএনপি আবারও নিজেদের সন্ত্রাসী দল প্রমাণ করল। বিএনপি-জামায়াত জোট এরা যে সন্ত্রাসী এবং বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল এটাই তারা আবার প্রমাণ করল। 
তিনি বলেন, কানাডার কোর্টও কিন্তু কথাটা কয়েকবার বলেছে। সেখানে যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সেখানে আশ্রয় চাইতে গিয়েছিল, তারা কিন্তু পায়নি। সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। তাদের সঙ্গে যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, এদের স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে এরা বিশ্বাস করে। অবৈধ ক্ষমতাটাই এরা ভালো বোঝে। 
মাঝখানে তারা কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল এবং আপনারা বিশেষভাবে লক্ষ্য করছিলেন আমাদের সরকার তাদের বাধা দেয়নি। তাদের একটাই শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে, তারা কোনো রকম অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করবে না। তারা যখন সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, তখন কিন্তু তারা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। 
বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, গত ২৮ তারিখ (অক্টোবর) তাদের যে ঘটনা, বিএনপি যে সমস্ত ঘটনা ঘটাল, বিশেষ করে যেভাবে পুলিশকে হত্যা করল, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপাল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল- এসব ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। 
তিনি বলেন, পুলিশকে তো মেরেছেই তারপর পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর হামলা। আজকে ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা করেছে, সেখানেও হাসপাতালে বোমা হামলা হয়েছে। নারী-শিশুদের হত্যা করেছে এবং সেখানে তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখেছে। আমি এখানে তফাৎ কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। নিজেরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই আবার পালাল। এখন আবার অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ? যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজটাই হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি  করে দেখাবে যে কিছু হয়নি।
২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল উপমহাদেশে আর কোনো দেশ করেনি। আমরা প্রথম এই টানেলটা করলাম। চট্টগ্রামে একটা বাণিজ্যের জায়গা, পোর্ট রয়েছে। সেখানে টানেল তৈরি করে যখন আমরা উদ্বোধন করছি, তখন এখানে তারা মানুষের ওপর হামলা করছে, পুলিশের ওপর হামলা করছে, মানুষ খুন করছে। তাদের হামলায় লক্ষণীয় বিষয়  হলো, তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গুলি কারা কারা করেছে, তাদের নামধাম বের করা হবে। কারণ তারা তা প্রকাশ্যেই করেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর তারা (বিএনপি) যেভাবে চড়াও হলো, বুঝতে পারলাম না কেন হঠাৎ এমন হামলা। কারণ সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দেয়। টক শো’তে বরং সবকিছুতেই সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে তাদের (বিএনপি) এত রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর? সব জায়গায় তাদের নিউজ সবার আগে। আমার নিউজ সবার পরে। কোথাও কোথাও আমাদের নিউজ ৪ নম্বর/৫ নম্বরেও থাকে। কিন্তু তারাও যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছিল। তারপরও কেন তাদের রাগ। সাংবাদিকদের চিকিৎসার বিষয়টি সরকার দেখবে বলেও জানান তিনি।
যাদের বাস পুড়েছে তাদেরটাও সরকার দেখবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে তারা একই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে। পরে ২০১৪ ও ১৫ সালে একই রকম অবস্থা। তিনটি বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর হামলা। শত শত মানুষকে তারা নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে তারা ব্যবসাটা চালাতে পারে। আহত নিহতদের আমরা সহায়তা দিয়েছি। 
সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মাত্র ১৪ বছরেই বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গেছি, সবাই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট। বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, সেই শিক্ষাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেব। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না। যাদের বাস- পুড়েছে, তাদের সহযোগিতা করব।
অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ না করলে কঠিন পরিণতি ॥ শঠের সঙ্গে শঠের মতো আচরণ করতে হবে- এমনটা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এখানে সেখানে চোরাপথে গিয়ে একেকটা গাড়ি পোড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা ও গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে।’
অগ্নিসন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিন, দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী ॥ ২৮ অক্টোবর বা পরবর্তী সময় যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু অপরাধী জামিন পেয়ে ছুটে এসেছে। জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা জামিন পেয়ে অপরাধ করছে। এদের দ্রুত সাজা দিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত। এভাবে আগুন  লাগাবে আর মানুষের ক্ষতি করবে এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। যারা এভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে, তাদের সাজাটা যেন ঠিকমতো হয়; সেই ব্যবস্থা নিতেই হবে। যে হাত নিয়ে আগুন দেবে, সেই হাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলে তাহলে তারা এর কষ্টটা বুঝতে পারবে।
এ সময় দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে।
২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় সরকারের পক্ষে গেল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভ-লোকসানের ব্যাপার না। মানুষকে হত্যা করছে, মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বরং আমাদের লাভ-লোকসান না জিজ্ঞেস করে বিএনপিকে জিজ্ঞেস করা দরকার; তারা যে গুন্ডামি-সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে তাতে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? এটা আপনারা (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী) বরং বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করুন, এসব করে তারা কী অর্জন করছে। 
ইমেজ বাড়াতে বিএনপি ভাড়াটে লোক নিয়ে আসে ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা পরিচয়ে মিয়ান আরাফি নামে এক লোককে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে যান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। এ সময় সংঘর্ষে আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ওই ব্যক্তি। এ সময় ওই ব্যক্তি ভিসানীতির ব্যাপারেও কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকেও ছাড়া হবে না। তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যে যতই বড় হোন না কেন আইন সবার জন্য সমান। তাকে খোঁজা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী জিজ্ঞাসাবাদে তো সব সত্য বলে দিয়েছেন। বিএনপি যে বিভ্রান্তি ছড়াতে তাকে যে ভাড়া করে এনেছিল, সে যে ভাড়াটে- তাও বলে দিয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিএনপির ইমেজ বাড়ানোর জন্য ভাড়াটে লোক নিয়ে এসেছিল। সে মার্কিন নাগরিক। যারা কথায় কথায় স্যাংশন দেয় তাদেরও বিষয়টা দেখা উচিত।
রুটি-রুজির কারখানা ধ্বংস করলে চাকরিটা কী থাকবে?  পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলোচনার (মজুরি বৃদ্ধি) এক পর্যায়ে হঠাৎ তাদের (পোশাক শ্রমিক) মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালাও-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা।’ এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, হঠাৎ গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে। ১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, তখন গার্মেন্টস কর্মীরা কত টাকা মজুরি পেত? মাত্র ৮০০ টাকা।

আমরা সেটা এক হাজার ৬০০ টাকা করি। কিন্তু যখন সরকার থেকে চলে যাই, তখন এটি কার্যকর করেনি বিএনপি। কার্যকর করেছি ২০০৬ সালে এসে। আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে প্রথম ধাপে তিন হাজার ৫০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করি, দ্বিতীয় ধাপে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা, তৃতীয় ধাপে আট হাজার ৩০০ টাকা করেছি। এই অল্প সময়, মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে তিন দফা তাদের মজুরি বাড়িয়ে আট হাজার ৩০০ টাকা করেছি।

তিনি বলেন, শুধু তা-ই নয়, তাদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি করে দিয়েছি। শ্রমিকদের টিফিনের ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ সব রকমের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। করোনাকালীন যখন মালিকরা বেতন দিতে পারছিল না, সেই বেতন আমি সরকারের পক্ষ থেকে মালিকদের হাতে না দিয়ে প্রতিটি গার্মেন্টস শ্রমিকের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছি। সরাসরি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের হাতে পৌঁছে দিয়েছিলাম। মালিকদের বিশেষ প্রণোদনা দেই, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিনিসের দাম, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এটা তো সবাই জানে। বিশ্বব্যাপী, শুধু বাংলাদেশে না, বাংলাদেশে তো আমরা যে পয়সায় কিনে খেতে পারি, বিদেশে কিন্তু সে অবস্থা না, আরও খারাপ। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। বিশেষ পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি, যাতে স্বল্প মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা যদি রেশন নিতে চায়, মালিকদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া আছে। তারা কিন্তু অল্প পয়সায় এদের খাদ্যসামগ্রীও দিয়ে থাকে। এই সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি। এরপর তারা যখন দাবি করেছে, আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় একটা কমিটি করে দিয়েছে, আলোচনা চলছে। সেই আলোচনায় একটা কথা ছিল, এই ডিসেম্বর থেকেই তারা এই মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেবে, এ বিষয়ে কত বাড়বে না বাড়বে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই আলোচনার পর্যায়ে হঠাৎ তাদের মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালাও-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেওয়া কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? এদের কারণে সেখানেও দুটি জীবন ঝরে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। 
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী ॥ বর্তমান সরকারের কলেবর যা আছে নির্বাচনকালেও তাই থাকার ইঙ্গিত দিয়ে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আরপিও অনুযায়ী যখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে এবং নমিনেশন সাবমিট করা হবে তখন থেকেই মন্ত্রীরা আর কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবে তাদেরকে ভোট চাইতে হবে। 
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় কোনো মন্ত্রী তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো রকম সরকারি সুযোগ- সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার তো থেমে থাকবে না। সরকারি দৈনন্দিন যে কাজগুলো সেগুলো কিন্তু করতে হবে। তিনি বলেন, আকার ছোট করলে অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না। সেগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। সেগুলো যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা। 
নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ছোট হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তা সময়ই বলে দেবে। নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে গেলে আমার  মতো এমপি-মন্ত্রীরা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। একটি অফিস প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি যেখানে ভোটের সময় সেখানেই বসব। নির্বাচন সময়মতোই হবে। 
ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপির তফাৎ দেখেন না প্রধানমন্ত্রী ॥ ফিলিস্তিনে ইসরাইল যেভাবে হামলা করছে ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় হওয়া হামলার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নিয়ে বিএনপি কেন কথা বলে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সরকারপ্রধান।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় যেমন ইসরাইল হাসপাতালে হামলা করল বিএনপি একই কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। মনে হয়, ইসরাইল আর ওদের মধ্যে ভালো একটা সমঝোতা আছে। ঠিক একইভাবে ওখানেও শিশু-নারী হত্যা। এরাও এখানে পুলিশ হত্যা করছে। আমি কোনো তফাৎ দেখি না। তিনি বলেন, বিএনপি বা জামায়াত এরা কিন্তু এখন পর্যন্ত টু শব্দ করছে না। অথচ আমরা সবসময় কিন্তু ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি। তাদের জনগণের সঙ্গে সবসময় আছি। আমি আন্তর্জাতিকভাবে যেখানে যাই তাদের কথা বলি। তাদের ন্যায্য অধিকার কিন্তু ফেরত দিতে হবে, এটাই আমরা চাই।
তিনি বলেন, যারা (বিএনপি) এত কথা বলে, আবার ইসলামি ভাব ধরে তারাও টু শব্দ করছে না। কাদের স্বার্থে? সেটা আমারও প্রশ্ন। বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না কেন? এই যে শিশুদের হত্যা করছে, হাসপাতালে বোমা মারছে কই তারা তো টু শব্দটাও করছে না। সংসদে আমরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব  নিয়েছি। সাংবাদিকরা এটা নিয়ে কথা বলল না, ধন্যবাদ দিল না। কেন কথা বলল না জানি না, হাসতে হাসতে বলেন, দুঃখ পেলাম।
বেলজিয়াম সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে ॥ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী তিন বছরের পরিবর্তে ছয় বছরের জন্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বেলজিয়ামে সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব এ সফরকালে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কানেক্টিভিটি- শিক্ষা, গবেষণা, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং চিকিৎসা সামগ্রী উৎপাদনে বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর