• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ইসলামপুরে উন্নয়ন সংঘের সিডস প্রকল্পের ভাসমান বিদ্যালয়

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২১  

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন কবলিত একটি গ্রাম বরুল। এই গ্রামে প্রায় ৭৫০টি পরিবার বসবাস করে। গ্রামটি যমুনা বেষ্টিত বন্যা কবলিত এলাকা। সেখানে প্রতিবছরই বন্যা ও নদী ভাঙ্গন লেগেই থাকে। সেই গ্রামের যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই খারাপ। একমাত্র নদী পথ ছাড়া তাদের গ্রাম থেকে বের হবার অন্য কোন বিকল্প নাই। এই গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি নূরানি মাদরাসা ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। গ্রামের লেখাপড়ার অবস্থা খুবই নিম্ন পর্যায়ের ও নিম্নমানের। বন্যার সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছোট ছোট নদী পার হয়ে স্কুলে যেতেই চায়না, এতে করে ছোট ছেলেমেয়েরা অতি সহজেই লেখাপড়া থেকে বি ত হয়। এমনকি পড়ালেখায় অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। বরুল গ্রামের লেখাপড়ার মান মোটেও সন্তোষজনক নয় ।

একসময় স্ট্রমি ফাউন্ডেশন-হেইবাডেন এর প্রতিনিধি দল এই এলাকা পরিদর্শন করতে আসলে বিষয়টি তাদের নজরে পড়ে। তারই প্রেক্ষিতে স্ট্রমি ফাউন্ডেশন-হেইবাডেন এর অর্থায়নে উন্নয়ন সংঘ সীডস প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। এলাকার নিরব চাহিদা সংস্থা উপলব্ধি করতে পেরে দাতা সংস্থার নিকট একটা ভাসমান স্কুল চালু করার প্রস্তাব করে। স্ট্রমি ফাউন্ডেশনও বুজতে পারে ভাসমান বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার হার বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার সুব্যবস্থা হবে। এ ব্যাপারে এলাকার চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করে তাদেরকে এই বিষয়টি বুঝালে তারা সকলেই এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে এবং একমত পোষণ করেন।

২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর উন্নয়ন সংঘ সীডস প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ভাসমান বিদ্যালয় তৈরি করে বরুল গ্রামের গণ্যমান্য ও প্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় এলাকার গণ্যমান্য, শিক্ষক, ইউপি মেম্বার, পুরুষ, মহিলা, কিশোর-কিশোরী ছোট ছেলেমেয়েসহ প্রায় ৩৫০ জন লোক উপস্থিত ছিলেন। এই ভাসমান বিদ্যালয় পেয়ে এলাকাবাসী খুশীতে আত্মহারা হয়ে উঠে। তারা আজ স্ট্রমি ফাউন্ডেশন-হেইবাডেন ও উন্নয়ন সংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

বরুল গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল বারিক মন্ডল বলেন, এই ভাসমান স্কুল পেয়ে আজ আমরা নিজেদেরকে ধন্য মনে করছি। আমার বিশ্বাস এই এলাকার লেখাপড়াও শিক্ষার হার অবশ্যই বাড়বে । এই মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে দাতা সংস্থা স্ট্রমি ফাউন্ডেশন-হেইবাডেনসহ উন্নয়ন সংঘকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

গ্রামের রওশনারা বলেন, এমন স্কুল আমরা কোনদিনও দেখিনাই, আমরা আমাদের সন্তানকে এই স্কুলেই পড়াবো। যারা এই স্কুল দিছে তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ দেই।

উল্লেখ্য, উন্নয়ন সংঘের সিডস প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ভাসমান নৌকাটি এলাকার অন্যান্য সামাজিক কাযক্রম যেমন বিচার সালিশ, বন্যার সময় উদ্ধার কাজ, কিশোরী শিক্ষা কাযক্রম, ঝরেপড়া শিশুদের নিয়ে ব্রীজ স্কুল কাযক্রম পরিচালিত হয়। এককথায় ভাসমান নৌকাটি মাল্টিপারপাস সামাজিক কাযক্রমে ব্যবহারিত হচ্ছে। করোনাকালিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন এলাকায় অনন্য সাধারণ ভূমিকা রাখছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষা ও সামাজিক কাজে এ ধরনের প্রকল্প একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করেছে। অন্যান্য দ্বীপচরবাসী এ ধরনের ভাসমান বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর