• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

তারা জীবিত থেকেও মৃত!

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৪  

জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের হিরণ্যবাড়ি এলাকার আলমগীরের স্ত্রী মোছা. আঞ্জুয়ারা (৩৯), মৃত মেহার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৬৪) ও মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. জাহানারা (৫২) ভোটার আইডিতে মৃত দেখানোর ফলে তারা এখন জীবিত থেকেও মৃত অবস্থায় বসবাস করছেন। জানা গেছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ৭ থেকে ৮ বছর ধরে তথ্য সংগ্রহকারীদের গাফিলতির কারণে তিন নারী জীবিত থেকেও ভোটার আইডিতে তারা মৃত। ফলে বিধবা ও বয়স্ক ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়াও আইডি কার্ডে নাম সংশোধনের জন্য সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রানি হচ্ছেন তারা। আঞ্জুয়ারা বেগমের দাবি, গত ৬ বছর ধরে ভোটার আইডি তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়। ভোটার আইডিতে মৃত হওয়ার ফলে ছেলে-মেয়েদের স্কুলের উপবৃত্তি করাতে পারছেন না। এছাড়াও ভিজিডি, ভিজিএফ, টিসিবিসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে সমস্যা হচ্ছে। মৃত থাকার ফলে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি। নির্বাচন অফিসে গেলেও আইডি ঠিক করে দিতে পারেনি। তারা এই এলাকার তথ্য সংগ্রহকারী শফিকুল মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। মরিয়ম বেগম বলেন, আমার স্বামী-সন্তান কেউ নেই। আমার বয়স ৬০ বছরের বেশি। আমি এখন কাজ করতে পারি না। সরকার একটি বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছিল। সেটিও মৃত বলে বন্ধ করে দিয়েছে। গত ৮ বছর ধরে আমি মারা গেছি, এটাই ভোটার আইডিতে দেখায়। জাহানারা বলেন, ভোটার আইডিতে আমাকে মৃত দেখানো হলেও দিব্বি বেঁচে আছি। তারা কীভাবে আমাকে মৃত বানায় আমি বুঝি না। তাদের ঐ ভুলের কারণে আজ আমি এই ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। যেখানেই কোনো কিছুর জন্য যাই, তারাই বলে আপনার ভোটার আইডিতে আপনি মৃত। এই আইডি দিয়ে কোনো কাজই আপনি করতে পারবেন না। আইডি কার্ড ঠিক করার জন্য শফিকুল মাস্টারের পেছনে অনেক ঘুরেছি। সে এই কার্ডটি ঠিক করে দিচ্ছে না। তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম নিজের ভুলের দায় স্বীকার করে বলেন, এটা আমারই ভুল। আমি এ জন্য অপরাধী। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাজ করে দেবো। সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, ঐ সব নারীদের মৃত দেখিয়ে তাদের সুবিধাভোগী বিধবা ভাতার কার্ড অন্যত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমি মেম্বর হিসেবে নির্বাচিত ছিলাম না। এইটা দুর্নীতি করছে দুই ব্যক্তি। একজন হলেন সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন, আরেকজন ভোটার তালিকা তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। মহাদান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, ভোটার আইডিতে তিনজনকে মৃত দেখালেও তারা এখনো জীবিত। যারা তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে তারাই এই ভুলটি করেছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তারা আমার কাছে আসলে আমি প্রথমেই তাদের আইডি কার্ডের বিষয়টি সমাধান করব। তারা যেন দ্রুত নাগরিক সেবা পান। এছাড়াও অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ঐ শিক্ষককে আমার স্টাফদের মাধ্যমে আসতে বলেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর