• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

টাঙ্গাইলে পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২  

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারনে টাঙ্গাইলে প্রতিদিনই বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমির ক্ষেত। পানি বাড়ায় টাঙ্গাইলের ৬ টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এর ফলে গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব, গো-খাদ্যের সংকট, কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে সর্দি-জ্বর দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও পানি বৃদ্ধির কারনে বিভিন্নস্থানে নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীন সব নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক আকারে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টি গ্রাম, কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী, দুর্গাপুর, সল্লা ও দশকিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ টি গ্রাম, গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ও হেমনগর ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম, বাসাইল উপজেলার সদর, কাশিল ও ফুলকী ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া, কাকুয়া, কাতুলি ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম, নাগরপুরের ভাড়রা, সলিমাবাদ ও দপ্তিয়র ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ওইসব এলাকার অন্তত ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে রোববার (১৯ জুন) ভোরে কালিহাতী উপজেলার সল্লা ও হাতিয়া বাঁধের কিছু অংশ আর আনালিয়াবাড়ী সড়কের পাকা সলিং ভেঙে ফসলি জমি-ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও শনিবার (১৮ জুন) দিনগত রাতে বাসাইল পৌর এলাকার দক্ষিণ পাড়া-বালিনা সড়কের একটি অংশ পানির তীব্র ¯্রােতে ভেঙে পৌর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

কাকুয়া ইউনিয়নের জুয়েল মিয়া, দুর্গাপুরের সাইফুল ইসলাম, গোবিন্দাসীর নূর হুসাইন, চরপৌলির তানভীরসহ বন্যা কবলিতরা বলেন, রাতের মধ্যে হু হু করে পানি বেড়ে বাড়ি ঘর প্লাবিত হচ্ছে। বাড়ি-ঘরের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার আগেই ঘরে পানি ঢুকছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমাদের। 


 
কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার জানান, হু হু করে পানি বাড়ছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে চরম দুর্ভোগে রয়েছে সাধারণ মানুষ। তারা নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটা পারছেন সাহায্য করছেন। 

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে বন্যার ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবেনা। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বরাবরের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেও জানান তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর