• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ঠাকুরগাঁওয়ে শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪  

তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত ঠাকুরগাঁও জেলার জনজীবন। এতে দুস্থ, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিন্নমূল মানুষ ও কর্মহীন শ্রমিকদের। তীব্র শীতে প্রশাসন অনেক সামর্থবান ব্যক্তি বা সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান,স্থানীয়রা। জানা যায়, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ও ঠান্ডায় বিপর্যস্ত ঠাকুরগাঁও জেলার জনজীবন। টানা ৪/৫ দিন ধরে উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শৈত্য প্রবাহ, ঠান্ডা বাতাসে নাকাল হয়ে পড়েছে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, দুস্থ ও অসহায় পরিবারগুলো। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিন্নমূল মানুষ ও কর্মহীন শ্রমিকদের। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকে খড়কুটা জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তবে খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়েও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছে না। একদিকে অসহায়, দরিদ্র, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষ তীব্র শীত, হিমেল হাওয়া ও ঠান্ডায় অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আর অন্যদিকে কর্মজীবী শ্রমিকরা ঠান্ডায় কাজ করতে না পেরে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে পরিবার পরিজন নিয়ে। এদিকে কুয়াশা ও শীতে কৃষি ও কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কুয়াশা ও শীতে রাস্তায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। গাড়ি চালাতে গেলেও দিনের বেলাতেই হেড লাইড জ¦ালিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তবে এ শীতে অনেক ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার তীব্র শীত ও ঠান্ডায় অনেক মানুষ শীত ও শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধেও সংখ্যাই বেশি। ঠাকুরগাঁওয়ে তাপমাত্রা নিরূপণের কোনো কার্যালয় নেই। তবে কৃষি সম্প্রসাারণ অধিদপ্তর প্রতিদিন তাপমাত্রা পরিমাপ করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ৪/৫ ধরে প্রথমে মৃদু ও পরে তীব্র শৈত্যপ্রবাাহ চলছে জেলায়। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৪-৯৬ শতাংশ। আর আজ শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭-৯৮ শতাংশ। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রহিমানপুর, ভুল্লি, খোচাবাড়ি, বেগুনবাড়ী, নারগুন, আখানগর এলাকার রফিকুল ইসলাম, আরমান আলী, জয়ন্ত বর্মন, মামুনি বালাসহ অনেকে জানান, শীতে সবার চেয়ে বেশি কষ্ট বেশি আমাদের মতো বয়স্ক মানুষের। গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, শীতের জন্য রাস্তায় বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। আর রাস্তায় মানুষের চলাফেরাও কমে গেছে। কুয়াশায় হেড লাইড জ¦ালিয়ে গাড়ি চালাই । তারপরেও দুর্ঘটনার ভয় থাকে। প্রচন্ড শীত ও কুয়াশায় আর গাড়ি কম চলায় রোজগার একেবারেই কমে গেছে। কিভাবে যে এ শীতে পরিবার নিয়ে চলবো? সদর উপজেলার মুন্সিপাড়া মহল্লার দিনমজুর ও শ্রমিক রহমত আলী ও মহিবুল্লাহ জানান, হাত পা ঠান্ডায় শীতল হয়ে আসছে। কোন কাজ করা যাচ্ছে নাহ। আর এ সময়ে মানুষ কোন কাজও করাচ্ছে না তাই অনেক শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। শীতে শ্রমিক ও দিনমজুরদের জন্য প্রশাসন ও সরকার কোন ব্যবস্থা নিলে খুব উপকার হতো। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ও খিরদ চন্দ্র বর্মন জানান, শৈত্য প্রবাহ ও ঠান্ডার কারণে ফসলের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে আলু, গমসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষতি হচ্ছে কুশায়া ও ঠান্ডায়। আর প্রচন্ড ঠান্ডায় মাঠে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা ও শরীর স্থবির অবশ হয়ে আসছে। ঠিক মতো কাজ করতে না পারায় কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রকিবুল আলম বলেন, কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগী হাসপাতালে বেশি আসছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ। বিগত এক সপ্তাহের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ এ ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রচন্ড শীতে শীতবস্ত্র ও কম্বল না পাওয়া কষ্ট পাওয়া বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুণবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে বরাদ্দ থাকার পরেও শীতার্ত ও দুস্থ মানুষকে কম্বল দিতে পারিনি। কারণ এতে আচরণ বিধি লংঘন হওয়ার বিষয় থাকে। তবে নির্বাচনের পরে কম্বল দেওয়া শুরু করেছি। এটা চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলায় প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের মাধ্যম্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে সেগুলো বিতরণ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগ সভাপতি এ্যাড.অরুনাংশু দত্ত টিটো জানান, এ এলাকায় অসহায় দরিদ্র ও দুস্থ এবং ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তীব্র শীতে তাদের কষ্ট লাঘব করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো: মাহবুবুর রহমান জানান, উত্তরের এ জেলায় প্রতি বছরই এমনিতে অনেক শীত থাকে। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় শৈত্য প্রবাহর মাত্রা অনেক বেশি। এ শীতে অসহায়, দুস্থ, দরিদ্র এবং ছিন্নমূল মানুষ যেনো কষ্ট পা পায় তারজন্য ১লাখ কম্বল চাওয়া হয়েছিল। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দঅনেক কম পেয়েছি। আমরা আবারো চাহিদা দেবো কম্বল ও শীত বস্ত্রের জন্য। এ তীব্র শীতকে মোকাবেলা করতে জেলা প্রশাসন সব ধরণের ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর