• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

৩০০ স্টল, কয়েক হাজার প্রাণী, গরুর র‍্যাম্প শো

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২৪  

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ২০০৮ সালে দুগ্ধ খামারের যে স্বপ্নবীজ পুঁতেছিলেন, ১৬ বছর পর তা মহিরুহ। সাত দিয়ে শুরু, এখন তাঁর খামারে পশুর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। ২০০২ সালে ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করে পৈতৃক ঢেউটিনের ব্যবসায় নিজেকে জড়ান। সেই ব্যবসায় টেকেনি মন। ২০০৮ সালে নিজেই হাঁটেন নতুন পথে, একা। রাজধানীর বছিলায় ১০ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা ইমরান হোসেনের ‘সাদেক এগ্রো’ এখন দুগ্ধশিল্পের তাজা এক বিজ্ঞাপন। সময়ের হাত ধরে সেই খামারের ব্যাপ্তি বেড়েছে অনেক। ঢাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে কুমিল্লা, পাবনা, যশোর, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়েছে দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানটির সুখ্যাতি। বগুড়ার তরুণ তৌহিদ পারভেজ পড়াশোনা করতে যান নিউজিল্যান্ডের রাজধানী অকল্যান্ডে। পড়ার বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসায় (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস)। পড়ার ফাঁকে বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতেন আর জীবজন্তুর ছবি তুলতেন। আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যমে তাঁর ছবি নিয়মিত ছাপা হয়। আলোকচিত্রের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা উইকি লাভস আর্থ ২০২১-এ জমা পড়া এক লাখের বেশি ছবির মধ্যে সেরা পুরস্কার জেতেন তৌহিদ পারভেজ। আরেকটি শখ ছিল তাঁর– দুগ্ধ খামারে খামারে ঘুরে বেড়ানো। বড় বড় বিদেশি গাভি দেখে বিস্মিত হতেন। দেশে ফিরে ২০১১ সালে সাতটি এঁড়ে বাছুর কিনে নিজেই একটি গরুর খামার দিয়ে বসেন। এখন প্রায় ১২ বিঘা জায়গাজুড়ে তাঁর বগুড়া ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো ফার্ম লিমিটেড। এর বাইরে ৩৫ বিঘা জমিতে ধান ও বিদেশি জাতের ঘাস চাষ করছেন। গাভি ছাড়াও খামারে মোটাতাজাকরণ করা কয়েকশ গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। ইমরান ও বিপ্লবের মতো হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ খামার করে এখন সফল উদ্যোক্তা। শুধু ব্যবসা নয়, দেশের ক্ষুদ্র ও বড় খামারিদের এক ছাতার নিচে আনতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। যে সংগঠনের সদস্য এখন ৫৫ হাজারেরও বেশি খামারি। সংগঠনের উদ্যোগে জেলায় জেলায় আয়োজন করা হয় প্রাণিমেলা, সুলভ মূল্যে মাংস-দুধ বিক্রি, প্রশিক্ষণ, সভা-সেমিনার, খামারি উৎসব। গেল কয়েক বছর ঢাকায় প্রাণিসম্পদ মেলার আয়োজন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কাউন্সিল (বিপিআইসি)। এবারও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে বসছে দু’দিনের প্রাণিসম্পদ মেলা। এবারের মেলা অন্য বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ঢাকার বুকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে জমকালো মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমবারের মতো খামারিদের অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণিসম্পদে ভরব দেশ, গড়ব স্মার্ট বাংলাদেশ।’ বাস্তবায়ন করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সহযোগিতায় থাকছে বিডিএফএ ও বিপিআইসিসি। গতকাল মঙ্গলবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, পশু প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে স্টল। মেলার অন্যতম আকর্ষণ গরুর র‍্যাম্প শোর জন্য বানানো হয়েছে গ্যালারি। নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মাঠজুড়ে করা হয়েছে বড় প্যাভেলিয়ন। মাঠের আশপাশ ও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক সেজেছে বর্ণিল সাজে। গতকাল বিকেলে মেলার প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। বিডিএফএর সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, প্রথমবারের মতো এবার মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়ে আমরা উজ্জীবিত। বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি দেশসেরা পশুপাখি নিয়ে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে মুখিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খামারিরা তাদের কথা তুলে ধরবেন। দর্শনার্থীদের প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও বিপণনে আগ্রহী করে তোলাই এ মেলার লক্ষ্য। সিনিয়র সহসভাপতি আলী আজম শিবলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় খামারিরা এ দেশে প্রাণিসম্পদ খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। তবে সমৃদ্ধ এই খাত নানা কারণে এখন ধুঁকছে। গোখাদ্যের দাম কমানো, পশুর জাত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকিসহ নানা নীতি-সহায়তা দিলে এক সময় বাংলাদেশ মাংস ও দুধ রপ্তানি করতে পারবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, ব্যতিক্রমী এ মেলায় কয়েক হাজার খামারি তাদের সেরা গরু, ছাগল, গয়াল, মহিষ, ঘোড়া, ভেড়া, দুম্বা, পোষা প্রাণী, পাখিসহ নানা পশু তুলবেন। মেলায় ৩০০ স্টলে কয়েক হাজার প্রাণী থাকবে। সেই সঙ্গে মেলার মূল আকর্ষণ গরুর র‍্যাম্প শো। মেলায় ১৯টি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে। আয়োজন করা হবে প্রাণিসম্পদের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা বিষয়ে বেশ কয়েকটি সেমিনার। বিনামূল্যে মেলা ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, এ মেলা প্রান্তিক খামারিদের জন্য বড় সুযোগ। এখানে তারা পালন করা প্রতিটি গরু ভালো দামে দেশের স্বনামধন্য খামারিদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এটি সব খামারির মিলন মেলায় পরিণত হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর