• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

আওয়ামী লীগই প্রথম টাঙ্গাইলে রেল লাইন দেয়: প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২০  

টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর ওপর শুরু হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম সবচেয়ে বড় রেলসেতুর নির্মাণকাজ। আর এই রেলসেতুর যমুনা নদীর ওপরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজ উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ রোববার (২৯ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন সম্মেলনকক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ের গোলচত্বরেও এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। পরে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বক্তব্য রাখেন। সবশেষে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলাদাভাবে আরেকটি সেতু নির্মাণ, এটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনারা জানেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্বের মধ্যে সেতুবন্ধ করতে গেলে আমাদের ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে সেতু সংযোগ করতে হবে। ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে—এই দুটি সেতু যদি আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে। ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে, মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। আমাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ সুবিধা সবচেয়ে বড় বিষয়। এর আগে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা লেগে থাকতো। আওয়ামী লীগ থেকে তখন আমরা সহযোগিতার জন্য যেতাম। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়াগায় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। যোগাযোগ হলে মানুষের অর্থনীতি সচল হয়।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের ফলে মানুষের অনেক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। টাঙ্গাইলে কোনো রেললাইন ছিল না। আমরাই প্রথম টাঙ্গাইলে রেল লাইন দেই। পণ্য পরিবহনে রেল বিশেষ ভূমিকা রাখছে৷
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, জাপানের অর্থায়নে প্রকল্পটি জাইকা বাস্তবায়ন করছে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্স উপস্থিত ছিলেন- টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সাংসদ মো. ছানোয়ার হোসেন, সাংসদ ছোট মনির প্রমুখ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।
এদিকে, জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। প্রথমে ৪টি ট্রেন দৈনিক ৮ বার পারাপারের পরিকল্পনা থাকলেও যাত্রী চাহিদায় পরে তা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দিলে কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন স্বল্পগতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১৬ জোড়া রেল পারাপার হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে রেল। এছাড়া সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। রেলসেতু নির্মাণ করা হলে কোনো ট্রেনেই কোনো প্রকার সিডিউল বিপর্যয় ঘটবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই সেতু পারাপার হওয়া যাবে। একটি ট্রেন আরেকটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করবে না।
এদিকে, রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু হবে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। সেতুর উভয়পাশে প্রায় দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, প্রায় ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট অ্যান্ড এবং লুক ও সাইডিংসহ মোট প্রায় ৩০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু রেলসেতু ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাক হওয়ায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলোর ক্রসিংজনিত কারণে আগের মতো স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করতে হবে না। ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলোর রানিং টাইম আনুমানিক ২০ মিনিট কমবে, পরিচালন ব্যয় কমবে এবং রেলওয়ের আয় বাড়বে। এ সেতুতে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে এ রেলসেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ওই বছরই সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য চালু করা হবে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন রেলপথমন্ত্রী।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর