• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

এক কাতারে, এক আহারে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪  

বুটের পোলাও, আখনি অথবা খিচুড়ি এর পাশাপাশি রয়েছে খেজুর, জিলাপি আর পেঁয়াজু। এই এক আহার থাকে প্রায় ৩০০ প্লেটে। প্রতিদিনই সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের ইফতার আয়োজনে থাকে এই আহার। প্রায় ৭০০ বছর ধরেই ইফতারের এই ঐতিহ্য রয়েছে মাজারে। রোজায় প্রতিদিনই এভাবে ইফতার সাজিয়ে মাজারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী, ভক্ত, পাগল, ফকির, ভবঘুরে, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ অনেক অবস্থাসম্পন্ন মানুষ এককাতারে বসে পড়েন মাজারের আঙিনায়। সাইরেনের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সবাই ইফতার শুরু করেন। শুধু ইফতার না রোজায় প্রতিদিন সেহরিরও আয়োজন করা হয় হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে মুসাফিরদের সাহরি ও ইফতার করানোর ঐতিহ্য প্রায় ৭০০ বছর আগের। তাই অতীতের ন্যায় এবারো প্রথম রমজান থেকে শাহজালাল (রহ.) মাজারে মুসাফিরদের জন্য সেহরি ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। সেহরিতে খাওয়ানো হয় ভাত তরকারি অথবা খিচুড়ি। এছাড়াও ভক্ত আশেকানদের থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন খাবারও থাকে ইফতার ও সেহরির আয়োজনে। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের এই আয়োজনে সবচেয়ে বেশি খুশি হন স্থানীয় নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কারণ স্বল্প আয় করা রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ফেরিওয়ালা চাইলেও ইফতারে ভাল খাবার খেতে পারেন না। কিন্তু মাজারে তারা বিনামূল্যে ভাল মানের ইফতার খেতে পারেন। তবে স্থানীয়রা ছাড়াও ঐতিহ্যের এই ইফতারের স্বাদ গ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত মানুষজন ছুটে আসেন সিলেটে। ঢাকা থেকে এসে আহমদ আলী বলেন, অনেকদিন ধরে মাজারে আসবো বলে চিন্তা করছি। শুনেছি এখানে ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে ইফতার করে থাকেন। তাই রোজায় চলে আসলাম। আমরা মুসলমান ভাই ভাই। আমাদের কোনো হিংসা অহংকার নেই। সবার সঙ্গে ইফতারিতে খুব আনন্দ লাগে। সেই আনন্দে শামিল হতে বসছি ইফতার করতে। রিকশাচালক জামিল মিয়া বলেন, রোজার সময় দিনের বেলা যাত্রী খুব কম থাকে। তাই খুব বেশি টাকা পাই না। দোকানে আখনি পোলাও দিয়ে ইফতার করতে অনেক টাকা লাগে তাই আমি প্রতিদিন মাজারেই ইফতার করি। শাহজালালের (রহ.) মাজার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাজারে সাহরি ও ইফতার করেন। তবে ইফতারের সময় বেশি মানুষ থাকেন। সাহরির সময় মানুষ তুলনামূলক কম থাকেন। ২৫০জনকে এক সঙ্গে খাওয়ানোর জন্য থালা ও গ্লাস আছে মাজারে। এর বাইরেও প্রতিদিন প্রায় ১৫০ প্যাকেট ইফতার বিতরণ করা হয়। মাজারের আঙিনায় নারী পুরুষ আলাদা আলাদা সারিতে বসে নিজেদের খাবার গ্রহণ করেন। রান্না ও খাবার পরিবেশনের জন্য প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন মাজারে। হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার সেক্রেটারি সামুন মাহমুদ খান বলেন, মাজারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রমজান মাসে মুসাফিরদের ইফতার করানো। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৪০০ মানুষ মাজারে ইফতার করেন। রোজার প্রথম দিকে মানুষজন একটু কম আসেন। তবে এরপর থেকে মুসাফিরদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী খাবার ব্যবস্থা করি। প্রধান খাবারে থাকে পোলাওর সাথে কখনো আলু দিয়ে গরুর মাংস অথবা আলু দিয়ে খাসির তরকারি। এর সঙ্গে মানুষজন মাজারে যেসব খাবার দেন যেমন জিলাপি, বাখরখানি, খেজুর এসব পরিবেশন করি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর