• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

করোনাকালের যোদ্ধা কক্সবাজারের ছাত্রলীগ ও তাকওয়া ফাউন্ডেশন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২০  

কক্সবাজারে জেঁকে বসছে প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনা। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত সোমবার একদিনেই আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুই নারীসহ ৫ জন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে স্থাপিত করোনা ল্যাবে সোমবার ২৮৩ জনের নমুনা টেস্টে ৯২ জনের করোনা পজিটিভ ফল মিলেছে। দিন দিন রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। রোগীর সেবা ও মৃতদেহ দাফনে স্বজনরাও কাছে ভিড়ছে না। সাধারণ অসহায় মানুষের খোঁজ নিতেও ভয় পাচ্ছেন অনেক দানবীর।

 

এমন চরম মুহূর্তে করোনার উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কাফন-দাফন, আইসোলেশনে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিতকরণ ও করোনায় অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলোর দ্বারে দ্বারে সহযোগিতার উপহার পৌঁছে দেয়াসহ সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে অবিচল মাঠে কাজ করছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের মানবিক টিম ও তাকওয়া ফাউন্ডেশন। ২৬ মার্চ থেকে অর্ধশত উদ্যমী তরুণদের নিয়ে গঠিত এ টিম দুটির সদস্যরা যেকোনো প্রয়োজনে রামু ও সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চষে বেড়াচ্ছে।

 

জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ছাত্রলীগের মানবিক টিম ও তাকওয়া ফাউন্ডেশনের হুজুরদের সমন্বয়ে করোনায় মৃতদের দাফনের কাজ করা হচ্ছে। সোমবার ভোরে ও সকালে করোনায় মারা যাওয়া শহরের দুই যুবককে নিজেদের তত্ত্বাবধানে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছেন এ দুই টিমের সদস্যরা।

 

জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম সাদ্দাম হোসাইন জানান, সোমবার শহরের দুই তরুণ করোনায় মারা যান। এদের মাঝে পাহাড়তলীর এসারুল হক (৪০) আগে থেকেই করোনা পজিটিভ আর নুনিয়ারছড়ার মাহমুদ করিমে (৩০) করোনার উপসর্গ ছিল কিন্তু রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। তাদেরই পরিবার থেকে দাফনে সহযোগিতার জন্য ফোনে যোগাযোগ করা হয়। খবর পেয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের হুজুরদের সমন্বয়ে কক্সবাজারে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনে ছুটে যাই আমরা।

 

সাদ্দাম আরো জানান, শহরে পৌঁছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা শুরু করেন। তাকওয়ার মৌলানা ক্বারি আজিজুর রহমানের ইমামতিতে দুটি জানাজা সম্পন্ন করে তাদের কবরস্থ করা হয়।

 

ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের মতে, প্রকৃতির এই কঠিন সময়ে মানুষ খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত বেশিরভাগ মৃত ব্যক্তির কাছে যাচ্ছেন না স্বজনরা। এ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সমমনা তারুণ্যের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা তারেক, ইমরান, এনাম, আজাদ, শাহিন, নয়ন, আশিককে নিয়ে প্রথমে ৮ জনের একটি টিম গঠন করা হলে দাফনে যেহেতু আমরা তেমন পারদর্শী নয় তাই তাকওয়া ফাউন্ডেশনের এক হুজুরের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। রামুর পূর্ব মেরংলোয়া জামে মসজিদের খতিব আব্দুল মান্নানকে টিম প্রধান করে হাফেজ সাইফুল ইসলাম, হাফেজ মুহাম্মদ সাইদ, হাফেজ সৈয়দ করিম, হাফেজ মুহাম্মদ ইউছুপ, হাফেজ মুহাম্মদ জামিলকে টিম সহকারী করে ১৩ জনকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ দাফন টিম আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করে।

 

তিনি বলেন, টিম প্রতিষ্ঠার পর প্রথমে করোনা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। জীবানুনাশক তরল তৈরি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্প্রে করা এবং অসহায়দের মাঝে খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ করা হয়েছে। এসব দেখে স্বেচ্ছায় টিমে তরুণরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এখন আমাদের টিমে ৫০ জন সদস্য রয়েছে। এদের ৫ ভাগে ভাগ করে এক টিমকে করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন সচেতনমূলক কার্যক্রম, আরেক টিমকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে রোগী পৌঁছে দেয়া, আরেক টিমকে অসহায় মানুষের ঘরে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্টিকার লাগিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, আরেক টিমকে আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেয়া, অপর টিমকে সবজি চাষিদের ক্ষেতে পাঠিয়ে বাজার দামের চেয়ে প্রতি কেজি ৫ টাকা বেশি দামে সবজি কিনে বিনামূল্যে বিতরণ এবং আরেক টিম দাফন-কাফনে সহযোগিতা করছে। টিমের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনায় প্রান্তিক কৃষকের ধান কাটার কাজেও সহযোগিতা করেছে।

 

সাদ্দামের মতে, ত্রাণের অর্থ এসেছে টিম মেম্বারদের পকেট খরচ ও পরিবার থেকে স্বেচ্ছায় দেয়া টাকায়। তাদের ভালো উদ্যোগ দেখে দেশের এবং প্রবাসের অনেকে তাদের সঙ্গে সামর্থ অনুসারে যুক্ত হয়েছেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর