• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

চীন-ফেরত বিনিয়োগ টানতে তৎপর বাংলাদেশ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২০  

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে। করোনা ভাইরাস চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বিপদে ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত কারণে চীন থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে বা নিতে চাইছে অনেক দেশ ও কোম্পানী। কিছু বহুজাতিক কোম্পানি অন্য দেশে কারখানা স্থাপনের চিন্তা করছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আলাদা পরিকল্পনার প্রস্তাব চেয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

 

ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারসহ অনেক দেশ চীন ফেরত বিনিয়োগ পেতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি চীন থেকে কারখানা স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে। জাপান সরকার চীন থেকে কারখানা স্থানান্তরের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। চীন থেকে জাপানে ফিরে গেলে কিংবা দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগ করলে প্রণোদনা দেওয়া হবে। জানা যায়, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে আলাদা পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। এই চার সংস্থার পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দফা বৈঠক হয়েছে।

 

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, মহামারি করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চীন থেকে বিনিয়োগ স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ টানতে নতুন করে পরিকল্পনা নিয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি সভা হয়। চলতি মাসেও একটি সভা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিডার চেয়ারম্যান বলেন, করোনার কারণে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমলে সার্বিকভাবে অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এই অবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে, তাদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি যৌথ চেম্বারগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

জানা যায়, দেশে বড় বিনিয়োগ টানতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ হাজার একরের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ২৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব ইজেডে বড় বিনিয়োগ আনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী উন্নয়ন করে করোনা পরবর্তী বিনিয়োগ বাস্তবায়নে ৪ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা ঋণ সহয়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই এই অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই হবে।

 

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া বেজার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চীন থেকে করোনা পরবর্তী সময়ে বহু কোম্পানি উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর করবে। এ দেশের জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুল্ক্কমুক্ত আমদানি ও করপোরেট কর অবকাশ সুবিধা ২০২৩ সাল পর্যন্ত রয়েছে। সব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগামী ১০ বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা বাড়ালে এ দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। এ ছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কারখানা স্থাপনের সময় থেকে সাত থেকে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

 

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেজা প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। করোনা পরবর্তী বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সরকার নজর দিয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে যে, কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগ দেশে টানা হবে। এই বিনিয়োগ আনতে বিভিন্ন মেয়াদে কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে।

 

ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বহু কোম্পানি চীন থেকে গুটিয়ে নিয়ে ভারতকে উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিতে চাইছে। এর মধ্যে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা অ্যাপল রয়েছে। চীন থেকে উৎপাদন ব্যবসার ২০ শতাংশ ভারতে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী পাঁচ বছরে ভারতে চার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পারে অ্যাপল। এ চীন থেকে স্থানান্তর হওয়া কোম্পানির বিনিয়োগ টানতে চলতি মাসের শুরুতে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মনে করেন, লকডাউনের পরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজন বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগ টানা। এ ক্ষেত্রে জমি, অনুমতি ও শংসাপত্রের অভাবে বিনিয়োগ আটকে না যায় তা দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর