• বুধবার ২২ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে সবাইকে এক থাকতে হবে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১ মে ২০২৪  

দলের ভেতরে ‘মাই ম্যান’ সৃষ্টির অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি দলের মধ্যে গ্রুপিং বন্ধের নির্দেশনা দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির নেতাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, মাই ম্যান সৃষ্টি করা যাবে না। কোন্দল ও গ্রুপিং করে কোনো লাভ হয় না। কাউকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে দুঃসময়ে তাকে পাশে পাওয়া যায় না। কাজেই দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে সবাইকে এক থাকতে হবে, দলকে এগিয়ে নিতে হবে। দলের মধ্যে গ্রুপিং করার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিটি করতে হবে এলাকায় গিয়ে থেকে। তোমরা তো এখন অনেকেই দিনে গিয়ে মঞ্চে বক্তৃতা শেষে কমিটি ঘোষণা দিয়ে আসো। আগে আমি এলাকায় গিয়ে থেকে কাজ করতাম, নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতাম। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে নানা রকম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো দ্রুত নিরসন করতে হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে কথা বলতে চান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী। এসময় দলীয় সভানেত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আজ এসব নিয়ে কোনো কথা শুনব না। পরে এ নিয়ে কেউ কথা বলেননি। সূত্র জানায়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার দলের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সকল সদস্যদের উদ্দেশে তার কঠোর বার্তা দিবেন। সূত্র জানায়, তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিরা আগামীতে দলের ভালো অনুকম্পা পাবেন না, তা আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। পরবর্তী বৈঠকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে রির্প্টো পেশের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জুন মাসে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকব। সেখানে শুধুই সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলব। দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে কিভাবে দলকে সুসংগঠিত করেছেন, দেশের তখন কী অবস্থা ছিল, এখন কোথায় নিয়ে এসেছেন এসব নিয়ে স্মৃতি চারণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আশির দশকের ওই সময়ে তো দলের সভাগুলোও ঠিক মতো করা যেত না। কেউ কারও কথা শুনতেন না। এক নেতা আরেক নেতার দিকে তেড়ে আসতেন। সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এখন তো সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন। এখন তো আর কেউ কোনো ‘ভাইয়ের লোক’ নন। সবাইকে তো এক করতে পেরেছি। বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সময়মতো ব্যবস্থা নেবে। বৈঠকে উপজেলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, না হয়নি। নির্দেশ অমান্যকারীদের কোনো শাস্তি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমি আপনাদের বরাবর একই কথা বলেছি যে, সময়মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৩০ তারিখের বৈঠকের কোন সিদ্ধান্ত আসবে এ বিষয়ে কিন্তু আমি কিছু বলিনি। এখনো একই কথা বলব, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামছেন-এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতাদের কাছে আমেরিকা ভালো দেশ। তাদের প্রভু দেশ। কদিন আগে যুদ্ধের বিরোধিতা করায় সাধারণ মানুষের আন্দোলনে কী জুলুমটাই না করল আমেরিকার পুলিশ। ৭০০ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এমনকি নারী এক অধ্যাপককেও গায়ের জোরে মাটিতে ঠেসে ধরে হাতকড়া পরিয়েছে। আমেরিকা বলছেন, এটা নাকি গণতন্ত্রের অংশ। বিএনপি প্রভুুদের গণতন্ত্রের অংশ যদি এমন তাহলে তাদের কাছ থেকে (আমেরিকা) আমরাও গণতন্ত্র শিখছি। সামনে আন্দোলনের নামে অরাজকতা করলে সেটাই প্রয়োগ করব। বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু প্রমুখ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আজকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করলে সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এ বছর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর হীরক জয়ন্তী জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনার কারণে বড় করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়নি। কিন্তু এবার বড়সড়ো করে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও শেখ কামালের জš§ দিবস পালনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ আগস্টসহ বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক ছয়দিনের থাইল্যান্ড সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করবেন। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে, সোমবার সকালে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় সফরের অংশ হিসেবে গত ২৪ এপ্রিল ব্যাংককে পৌঁছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে কবে হয়েছে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসা দলের কাছে আজ গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। যাদের জন্মই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে তারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নে তোলার কে? যারা ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা কেন বুঝছে না দেশবাসী এই নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে খুশি। জনগণের আস্থা আওয়ামী লীগ পেয়েছে, কারণ মানুষ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ তাদের উপকার করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়া, যারা একেবারেই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া এদের কিছু বক্তব্য; আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এটা কীভাবে হলো আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক শক্ত, এভাবে সরকার উৎখাত করা যাবে না। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব যখন প্রশংসা করছে তখন কিছু মানুষ সমালোচনা করছে। যে যাই বলুক, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো দেয়নি, কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। টেস্ট আমরা বিনা পয়সায় করেছি, কোনো ধনী দেশও করেনি। আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছি। খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি। সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি। মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ঘরের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে গেছি। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে। সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা? মাথাপিছু আয় আমরা বৃদ্ধি করেছি, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছি। সব দিক থেকে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকটি শুরু হয়। প্রথমে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নানা ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার বিষয়েও আলোচনা হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটপাট করতে ক্ষমতায় যেতে পারছে না বলেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নেমেছে বিএনপি। বিএনপি এমন একটি দল যাদের কোনো মাথামু-ু নেই। দলটির প্রধান সাজাপ্রাপ্ত, আরেক ভারপ্রাপ্তও সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামি। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে নানা অপকর্ম করার জন্য অনলাইনে নির্দেশনা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে অপকর্ম করেছে, তা মানুষের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। সরকারপ্রধান বলেন, করোনার অতিমারি। এরপর আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি। এসব সমস্যার কারণেই কিন্তু আমরা নয়, সারা পৃথিবী, এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এক ধাপ ওপরে তুলব। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দেই, দিনবদলের সনদ আমরা ঘোষণা দেই। আজ দিনবদল ঘটেছে। তিনি বলেন, সব সময় আমরা গুরুত্ব দিয়েছি তৃণমূলের মানুষ ও তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির দিকে। আজ কেউ বলতে পারছে না যে গ্রামে দারিদ্র্য আছে। এখন বলে শহরে দারিদ্র্য। এখন অদ্ভুত এক হিসাব হয়ে গেছে, দারিদ্র্যের হার শহরে বেড়ে গেছে, গ্রামে না। অথচ এক সময় গ্রামের মানুষ একবেলা ভাত খেতে পেত না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগের চিকিৎসা পেত না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। আমাদের উন্নয়নে তৃণমূল মানুষের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি। স্বাধীনতার পরবর্তী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শূন্য হাতে ধ্বংসস্তূপের ওপর যাত্রা শুরু করে মাত্র ৩ বছর সাত মাসে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নত করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেশের সব অগ্রযাত্রা থেমে যায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে গেছে। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ওই নির্বাচনে আমরা ভোট বেশি পেলেও ষড়যন্ত্র করে আসন কম দেওয়া হয়েছে। কারণ আমি গ্যাস বিক্রিতে রাজি হইনি। খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রিতে রাজি হয়ে মুচলেকা দিয়েছিল। এখন দেশে গ্যাসের জন্য হাহাকার। গ্যাস বিক্রি করলে দেশের কল-কারখানা কোথায় থেকে গ্যাস পেত। খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েও গ্যাস দিতে পারেনি। কারণ তাদের সময় কোনো গ্যাসই পায়নি। ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভয়াল সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুঃশাসন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিতে দেশকে বারবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা নির্যাতন করেছে। তাদের নির্যাতনের ভয়াল দৃশ্য কখনো ভোলার নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের ফলেই দেশে ইমাজের্ন্সি আসে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেও ওই ওয়ান-ইলেভেন সরকার প্রথমে আমাকে গ্রেপ্তার করে। আওয়ামী লীগ ও আমাদের সকল সহযোগী সংগঠন মাত্র ১৫ দিনে আমার মুক্তির দাবিতে ৩০ লাখ মানুষের স্বাক্ষর গ্রহণ করে জমা দেয়। আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেও আরও ৪/৫টি মামলা দেয়। এসব প্রতিটি মামলা তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট প্রদানের পর সেসব মামলা বাতিল হয়ে যায়। আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো মামলা আমরা প্রত্যাহার করিনি। কারণ আমার সততার ওপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস ছিল। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। সেতু নির্মাণের এক বছরও হয়নি, এরই মধ্যে পদ্মা সেতু থেকে ১৫শ’ কোটি টাকার টোল আদায় হয়েছে। সকল খরচ, ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যায় বাদ দিয়েই এই টাকা আমাদের অর্জিত হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে পারে, বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা আমরা প্রমাণ করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমাদেরও কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- আমরা তা বিশ্বের সামনে প্রমাণ করেছি। এতে করে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন-ঠিকানাবিহীন থাকবে না উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন-ঠিকানাবিহীন থাকবে না। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা গৃহহীন মানুষদের বিনামূল্যে জায়গাসহ ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলা-উপজেলা গৃহহীন, ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা দিয়েছি। অল্প কিছু বাকি আছে, সেগুলোও শীঘ্রই হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কোনো মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই আমরা উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা পূরণ করতে পারব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দিনেও আওয়ামী লীগ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবে। আওয়ামী লীগকে সবসময় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশ ও মানুষের ওপর আস্থা রেখেই দেশ চালায়। সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের চেহারা আয়নায় না দেখে, মানবাধিকার নিয়ে সবক দেয় বাংলাদেশকে? মার্কিন কোনো পুলিশের গায়ে কোনো রাজনৈতিক দল হাত তুললে, কী করত সেখানকার পুলিশ? কদিন আগে যুদ্ধের বিরোধিতা করায় সাধারণ মানুষের আন্দোলনে কী জুলুমটাই না করল আমেরিকার পুলিশ। এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর জবাব কী? প্রচ- গরমে দেশবাসীকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় গরম ছড়িয়ে পড়েছে। শীঘ্রই বৃষ্টি হবে বলে আশা করছি। পহেলা আষাঢ় থেকে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ চালিয়ে যেতে হবে গোটা দেশে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর