• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

গাইবান্ধায় ডালের বড়ায় সচ্ছলতা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৯  

ভোর রাতেই জেগে ওঠে পাড়াটি। পরিবারের সকলেই হাত লাগায় বড়া তৈরির কাজে; কেউ যাঁতায় ডালের গা থেকে ছাল ছড়ায়, কেউ ডাল ধুয়ে পরিষ্কার করে, কেউ শিলপাটায় ডাল গুঁড়া করে, আবার কেউ চাল-ডাল একসাথে গুলিয়ে বড়ি তৈরি করে।

 

গাইবান্ধা শহরের উত্তর পাশে অবস্থিত খামার বোয়ালী গ্রাম। এ গ্রামের সংখ্যালঘু সাহা পরিবারের লোকজন এই ডালের বড়া তৈরি করেন। এই ডালের বড়া সুস্বাদু এবং চাহিদাও খুব। গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখার ফাঁকে ডালের বড়া তৈরিতে পিতা মাতাকে সহযোগিতা করে থাকে। এটা তাদের পরিবারের বাড়তি আয়ের অন্যতম একটি উৎস। সুনতি রাণী সাহা ও জানকী রাণী সাহা জানান, ডালের বড়ার উপকরণও খুব একটা বেশি নয়। প্রথমে ঠাকুরি বা মাষ কলাইয়ের ডাল গুড়ো করতে হয়। তারপর ডালে কালো জিরা মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটে মিশিয়ে নিতে হয়। তারপর তৈরি হয় ডালের বড়া।

 

এরপর চড়া রোদে পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে সব উপকরণ মেশানো ডালের মণ্ড হাতের মুষ্ঠিতে চেপে চেপে বিশেষ কায়দায় তার উপরে রাখতে হয়। নির্দিষ্ট আকারের বড়াগুলো তখন দেখতেও চমৎকার লাগে। সবশেষে রোদে শুকিয়ে তৈরি

হয় ডালের বড়া।

 

নিখিল চন্দ্র সাহা বলেন, অক্টোবর থেকে ফেব্র“য়ারি মাস পর্যন্ত চলে ডালের বড়া তৈরির কাজ। তিনি বলেন, এটা খুব খাটনির কাজ; যাঁতায় ডালের ছাল ছড়ানোর পর বড়া তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ঝনঝনা করতে চারদিন লাগে। এরপরই

বড়া বাজারে বা পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।

 

বাবলু চন্দ্র সাহা জানান, বড়া তৈরি তাদের বাপ দাদার পেশা। ভোর তিনটায় ঘুম থেকে ওঠতে হয়। প্রচুর চাহিদা এই বড়ার। ঠাকুরি কালাইয়ের দাম এবার অনেক বেড়েছে, আগে ৫০ কেজি বস্তা ছিল ২৬শ টাকা এখন সেই বস্তার দাম ৪হাজার টাকা। সে কারণে আগের মতো আর লাভ আসে না। তারপরও এই পেশায় এই গ্রামের ১৫টি সংখ্যালঘু পরিবার স্বজনদের নিয়ে খেয়ে পরে ভালোই আছে।

 

এই গ্রামের রঞ্জন সাহার মেয়ে আশা রাণী সাহা পড়েন গাইবান্ধা সরকারি কলেজ। তিনি একাদশ বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থী। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়া তৈরির কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করেন।

 

অখিল চন্দ্র সাহা জানান, প্রতিটি পরিবার দিনে ১০ কেজি পর্যন্ত এই বড়া তৈরি করতে পারেন। প্রতি কেজি ডালের বড়া  তরি করতে খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা। কিন্তু তারা বিক্রি করেন ২০০ টাকা প্রতি কেজি। মৌসুমী এই বড়া বিক্রি করে তাদের সচ্ছলতা ফিরেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর