• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

সরকারের নানা প্রচেষ্টা: এক যুগে ৩ লাখ টন বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩  

ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইলিশ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশেষ স্বীকৃতিও এসেছে দেশে। সরকারের নানামুখী কঠোর ব্যবস্থাপনায় গত এক যুগে দেশে ইলিশ উৎপাদন প্রায় তিন লাখ টন বেড়েছে। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মাছের ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। যার বাজারমূল্য ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। জিডিপিতে অবদানসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় ও আমিষ সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ইলিশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার প্রধান উৎস এই মাছ। এদিকে ইলিশ দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন, ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’) সনদ পায়। জিআই পণ্য হওয়ায় ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি এবং নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বিশ্ববাজারে সমাদৃত হবে। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের পোনা অবাধে নিধন বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্ষতিকর জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২০১৬ সাল থেকে উপকূলীয় জেলায় এই আইন বাস্তবায়নে বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও চাঁদপুরে এবং কারেন্ট জালের উৎপাদন বন্ধে মুন্সিগঞ্জে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জাটকা আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, বেচাকেনা ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাস জাটকা আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকার মানবিক সহায়তা দেয়। বঙ্গোপসাগরের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার ইলিশের প্রধান প্রজনন এলাকা চিহ্নিতকরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নানান ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রম স্থাপন ও অংশীদারত্বমূলক ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ, ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ, জাটকা সংরক্ষণে জাটকা আহরণের ওপর আট মাস (নভেম্বর-জুন) নিষেধাজ্ঞা আরোপ, ভিজিএফ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ইলিশ জেলেদের জীবিকায়নের ব্যবস্থা, নির্বিচারে জাটকা নিধন বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নভেম্বর থকে জুন মাস পর্যন্ত মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন, মা ইলিশ রক্ষায় প্রধান প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন প্রজনন এলাকাসহ সমগ্র দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন ও মজুত বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং আইন বাস্তবায়ন, প্রতি বছর জাটকা রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির লক্ষ্যে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন এবং জাটকাসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার গৃহীত নানা উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অভ্যন্তরীণমুক্ত জলাশয়, অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয়ের উৎপাদন, ব্যবস্থাপনার জন্য সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ-বাস্তবায়নের ফলে এই অনন্য অর্জন। তিনি বলেন, একক মৎস্য প্রজাতি হিসেবে বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে ইলিশ। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ, যার বাজারমূল্য ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় এক শতাংশের অধিক। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। বাংলাদেশের ইলিশ পেয়েছে জিআই পণ্যের মর্যাদা। দেশে-বিদেশে ইলিশ মাছের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জাতীয় মাছ ইলিশ সংরক্ষণে সবাইকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ইলিশের টেকসই ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর