• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

৭ সন্তান নিয়ে দিশেহারা সাজু-দুলেনা দম্পত্তি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৩  

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পোড়ারচরের সাজু-দুলেনা দম্পত্তি চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ৩ কন্যা ও ১ ছেলে সন্তান প্রসব করে আলোচনায় আসেন। তবে প্রসবের পরপরই মারা যায় ছেলে সন্তানটি। আগের ৫ সন্তানসহ তাদের সন্তান দাঁড়ায় ৯ জনে।
১৪ এপ্রিল মাঝ রাতে ঘুমের ঘরেই না ফেরার দেশে চলে গেছে তার চার মাস বয়সী সপ্তম সন্তান মারিয়া। মারিয়া মারা যাবার পর থেকেই শোকাহত সাজু-দুলেনা। সন্তান হারানোর দোষ হিসেবে নিজের দারিদ্রতাকেই দুষছেন দুলেনা বেগম।

অশ্রুসিক্ত নয়নে দুলেনা বেগম বলেন- ‘আমাদের অভাবের সংসার। বাচ্চাদের ভালোভাবে যত্ন নিতে পারি নাই। কোনো কিছু করতে পারি না। বেশি পোলাপান। ভালো কিছু সংগ্রহ করতে পারি না। খাওয়াতে পারি না ভালো মতো। ভালো মতো লেখাপড়া করাইতে পারি না। চলাফেরা করতে পারি না। আমি কাজ কাম করতে পারি না। এখন বাবুদের নিয়ে কই কাজ করমু? কি করমু? চলার কোনো পথ নাই।’

এখন সাজু-দুলেনা ঘরে রয়েছে ৫টি কন্যা সন্তান ও ২টি ছেলে সন্তান। বড় কন্যা সন্তানের বয়স ২০ বছর এবং ছোট কন্যা সন্তানের বয়স ৪ মাস। ৭ সন্তানের মধ্যে বড় দুই কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন সাজু মিয়া। এক সময় বেশ ভালো চললেও সাজু মিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে বেকার থাকায় অন্য পাঁচ সন্তান দিন পার করছেন খেয়ে না খেয়ে।

সাজু মিয়ার চতুর্থ সন্তান রিপন মিয়া বলেন- ‘আমরা এতগুলো ভাই-বোন। খেয়েও থাকি না খেয়েও থাকি। খুব কষ্টে জীবন কাটাই। অভাবের জন্য লেখাপড়াটাও ঠিকমতো করতে পারি না।’

সাজু-দুলেনার এমন করুণ অবস্থা দেখে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবেশী ও স্বজনরা। তবে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে সরকারি সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার লোকজন।

প্রতিবেশী আমেনা খাতুন বলেন- ‘এই দুনিয়ার মধ্যে আল্লাহ ছাড়া ওগর কিছু নাই। ওরা খুবই গরিব মানুষ। শেখ হাসিনা এতো সাহায্য দিতাছে। এগর কিছু সাহায্য করলে ওরা খুব উপকৃত হইতো।’

আরেক প্রতিবেশী সুজেদা বেগম বলেন- ‘মাঝে মধ্যে আমরা কিছু দেই। তার শ্বশুর বাড়ি থেকে কিছু দেয়। এভাবে কি আর দিন চলে? এহন যদি সরকারে কিছু সাহায্য করে তাহলে ওদের সংসার টিকতে পারে।’

এদিকে বারবার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করে সাজু মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে সাহায্য চাইছি। সাহায্য দেয় নাই। এখন আমি সরকারের কাছে সাহায্য চাই। এই পোলাপান নিয়ে আমি দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকবো। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। পায়ে ব্যাথা, কানে কম শুনি। আমি কোনো কাজ-কাম করতে পাই না। আমার সব ছোট ছোট পোলাপান। দুইটা মেয়ে আমি বিয়ে দিছি। বাকিদের ঠিকমতো খাবারও দিতে পারি না।’ তবে সাজু- দুলেনা দম্পত্তিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

ইসলামপুর উপজেলা ইউএনও মো. তানভীর হাসান রুমান বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে তাদেরকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা দেবো। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ভাতা যেন তারা পায় সেটার জন্য মাতৃত্ব কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর