• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ডলার দেব, রোজার পণ্যের এলসি খুলুন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩  

দেশীয় ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আসন্ন রোজা উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের আমদানিতে এলসি খোলা হচ্ছে কম।

ফলে চিনি, ছোলা, ডাল, দুধ, ফল, মসলার আমদানি কমে গেছে। এতে আসন্ন রোজায় এসব পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।

একই সঙ্গে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের রোজানির্ভর পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার জন্য বলা হয়েছে। এসব পণ্য আমদানিতে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান দেওয়া হবে। তারপর ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অস্থিরতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। এতে তারা এলসি খুলছেন না।

সূত্র জানায়, রোজানির্ভর পণ্য আমদানিতে মার্চ পর্যন্ত ২২০ কোটি ডলারের মতো প্রয়োজন হতে পারে। এসব ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংক দিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোগান দেওয়া হবে। রোজার পণ্য আমদানির এলসি খোলার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংক ডলার দিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমদানিকারকরা এলসি খুলতে নিরৎসাহিত হচ্ছেন।

দেশীয় ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আমদানিকারকরা নিত্যপণ্যের এলসি খুলতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে চারটি-ডলারের তীব্র সংকট, এর লাগামহীন দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম চড়া, বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ। এসব কারণে উদ্যোক্তারা চড়া দামে পণ্য আমদানি করে সেগুলো বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যের দাম হঠাৎ করে কমে গেলে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন। এসব কারণে এলসি খোলা কমে গেছে। একই কারণে পণ্যের আমদানিও কমেছে।

এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজার পণ্য আমদানিতে ডলারের জোগান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আমদানিকারকরা এলসি খুলছেন না। তারা ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখাচ্ছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় ২৭টি দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তুরস্ক রান্নার তেল, অলিভ অয়েল, ফল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। লেবানন ফল, তেল, দুধ, চিনি রপ্তানি বন্ধ করেছে। সাইবেরিয়া তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়া সানফ্লাওয়ার অয়েল, সয়াবিন রপ্তানিতে কর আরোপ করেছে। পাকিস্তান চিনি রপ্তানি বন্ধ করেছে। কুয়েত ভোজ্যতেল, মুরগির মাংস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কসোভো ভোজ্যতেল, চিনি ও ইরান থেকে পেঁয়াজ বন্ধ। ক্যামেরুন ভেজিটেবল অয়েল রপ্তানি বন্ধ করেছে। আর্জেন্টিনা সয়াবিন রপ্তানিতে করারোপ করেছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ কমেছে। তবে বাংলাদেশ ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল সবচেয়ে বেশি আমদানি করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর অবরোধের কারণে সে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। তবে সীমিত আকারে ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে। পামঅয়েল আমদানি হয় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। এর আমদানি আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকেও পণ্য আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চিনি, মসলা, পেঁয়াজ আমদানি হয় ব্রাজিল, ভারত, তুরস্ক থেকে। এসব দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে চিনি আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪৫ কোটি ডলারের। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ২৭ শতাংশ বেশি। জুনে এর দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছিল। এখন তা কমেছে। তবে রোজা উপলক্ষ্যে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে এর চাহিদা বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মসলা আমদানি হয়েছে ১২ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের ওই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১৪ কোটি ডলারের। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম প্রায় ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের জুনে তা বেড়ে শতভাগ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে এখন কমতে শুরু করেছে। কুরবানির ঈদের আগে এর দাম আবার বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ফল আমদানি হয়েছিল ২১ কোটি ডলারের। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১৪ কোটি ডলারের। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ফলের দামও বেড়েছে।

গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১১ কোটি ডলারের ছোলা ও ডাল আমদানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ১৩ কোটি ডলার হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলা ও ডালের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে রোজা নির্ভর পণ্যের দাম বেশি। অথচ ডলারের হিসাবে আমদানি হয়েছে কম। কিছু পণ্য ডলারের হিসাবে বেশি আমদানি হলেও দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পরিমাণে কম আমদানি হয়েছে।

মঙ্গলবার রোজার পণ্য আমদানি ও ডলারের জোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাল এবং ছোলার ১০ জন শীর্ষ আমদানিকারকদের নিয়ে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে তাদের বলা হয়েছে, রোজানির্ভর পণ্যের এলসি খোলার জন্য। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার দেওয়া হবে। কোনো কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক দিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোগান দেওয়া হবে।

পেঁয়াজের আমদানি কম হলেও এতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ পেঁয়াজের মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। রোজার শুরুর সময়ে দেশীয় পেঁয়াজ থাকবে বাজারে। ফলে পেঁয়াজের কোনো সংকট হবে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্যের আমদানি কমেছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশীয় দুধ প্রাস্তুরিত কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের জোগান কমে গেছে। একই সঙ্গে চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল উৎপাদন কম হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে যেতে পারে। এতে দামও বেশ চড়া। গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এখন কিছুটা কমলেও আবার পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, রোজানির্ভর বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে প্রায় ২২০ কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। এসব খাতে ডলারের জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মত আছে। তবে এসব পণ্যের এলসি খোলার জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর