• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলযোগাযোগ বন্ধ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২০  

জামালপুর জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ২৪ ঘন্টায় ৪ সেন্টি মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পউবো)’র জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান এটি নিশ্চিত করেছেন। 

 

জামালপুর রেল স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জ্বল মাহমুদ এবং দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন জানান-দেওয়ানগঞ্জ  রেলষ্ট্রেশনে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। আপাতত: জামালপুর থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত আছৈ। আগামী চব্বিশ ঘন্টা পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এই লাইনেও ট্রেন চলাচল বিচ্ছিন্ন হবার আশংকা করা হচ্ছে।

 

  ইতোমধ্যেই দেওয়ানগঞ্জ-ইসলামপুর উপজেলার বহু বসতবাড়ি-স্থাপনা-রাস্তাঘাট যমুনা বিলীন হয়েছে। জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ি, বকসিগঞ্জ ও জামালপুর সদর ৭টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৪০ টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। 

 

 দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, এই উপজেলায় দেড় লক্ষ মানুষ বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে উপজেলার পাঁচ শাতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মাঝে ৩৭ মেট্রিক টন চাউল, নগদ আড়াই লক্ষ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৫৭ হাজার পরিবারের মাঝে ভিজিএফ এর চাল বিতরণের কার্যক্রম চলছে।

 

 অপরদিকে এই উপজেলায় গো খাদ্যের জন্য ৫০ হাজার ও শিশু খাদ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন এ উপজেলায় এক লক্ষ ২০ হাজার মানুষ বন্যায় পানি বন্দি হয়ে পরেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ছয় হাজার ১৬০ জন মানুষ ৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন বন্যা দুর্গতদের মাঝে ১৯ মেট্রিক টন চাউল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। 

 

এদিকে ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী, বেলগাছা, চিনাডুলী, কুলকান্দি ইউনিয়নের যমুনার দ্বীপ চরের লোকজন নৌকার অভাবে তাদের ঘরের ধান চাল এমনকি গৃহপালিত পশু নিরাপদ স্থানে নিতে পারছে না বলে বেলগাছা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানিয়েছেন। 

 

বন্যা কবলিত এলাকার গুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুনাবাদ, চর আমখাওয়া ইউনিয়ন, ইসলামপুর উপজেলার পার্থর্শী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ইসলামপুর পৌরসভা, গোয়ালের চর,গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। মেলান্দহ উপজেলার, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, মেলান্দহ পৌরসভা, নাংলা, আদ্রা, ফুলকোচা, ঝাউগড়া, ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। 

 

সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, পোগলদিঘা, সাত পোয়া ও কামরাবাদ ইউনিয়ন। বকশিগঞ্জ উপজেলার সাদুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, ইউনিয়ন। জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষীরচর, তুলশিরচর ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ গৃহপালিত পশু নিয়ে উচু বাঁধে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। বানভাসিদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধা পানির, গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

 

ইসলামপুর চিনাডুলি ইউনিয়নে ৩৫০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি। মেলান্দহ ইউএনও তামিম আল ইয়ামীন জানান-বন্যা মোকাবেলায় এখনো ১৪ মে: টন ত্রাণ মজুদ আছে। পিআইও অফিস সূত্র জানিয়েছে আজ থেকে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার মহিষবাথান-মাহমুদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার অংশ বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মো.আমিনুল ইসলাম জানান বন্যার পানিতে ৭৩৯ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১৬ হাজার ৬৬ হেক্টর জমির আউস ধান এবং ২১ হাজার ২৭ হেক্টর জমির পাট তলিয়ে গেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর