• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ছে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২০  

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষাসহ ৯টি খাতে। অন্য খাতগুলো হল- কৃষি, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও ধর্ম। তবে শীর্ষে রয়েছে জনপ্রশাসন।


পাশাপাশি বরাদ্দ কমছে শিল্প, গৃহায়ন, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বের ভিত্তিতে উল্লিখিত খাতে পরিচালনা ও উন্নয়ন উভয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও হ্রাস করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলা, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও গরিব মানুষকে পুনর্বাসনে বেশি বরাদ্দ কাজে লাগানো হবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এই মোট ব্যয়ের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৪.৭ শতাংশ, জনপ্রশাসন খাতে ৬.৮ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬.১০ শতাংশ, প্রতিরক্ষায় ৫.৪ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৪.৯ শতাংশ ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ৫.১ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ৪.৮ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১৫ শতাংশ, কৃষিতে ৩.৬ শতাংশ, পরিবহনে ১১.৪ শতাংশ, গৃহায়নে ব্যয় করা হবে ১.২ শতাংশ। আর বিনোদন সংস্কৃতি ও ধর্মতে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে ব্যয় করা হবে ২৯.৪৭ শতাংশ।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সবেচেয়ে বেশি গরিব মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। প্রায় তিন কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত করেছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় করা হবে ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অবশ্য চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সব মিলে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে আগামী বছর স্বাস্থ্য খাতে অনেক পরিবর্তন আনবে সরকার। অতীতে স্বাস্থ্য খাতে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে এ বাজেট হবে অনেকটা করোনা মোকাবেলার বাজেট। ফলে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়বে ৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এ খাতে মোট বরাদ্দ থাকছে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।

কোভিট-১৯ কৃষি খাতেও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলছে। ফলে কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতি থাকছে আগামী বাজেটে। কৃষক টিকিয়ে রাখতে পারলে খাদ্য নিয়ে সমস্যা হবে না। এজন্য নতুন বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। আসছে বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, এটি মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

কৃষি খাত প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, কৃষি খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, কৃষক হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এজন্য কৃষককে আগে রক্ষা করতে হবে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে খাদ্য সংকটে পড়তে হবে না। করোনাভাইরাসের মধ্যেও মানুষকে খেয়ে বাঁচতে হবে, এটি মনে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও বরাদ্দ বাড়ছে প্রতিরক্ষা খাতে। নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় করা হবে ৩৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা, চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ১০৬ কোটি টাকা।

এদিকে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আসন্ন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৮ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এ খাতে চলতি বছরে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। ওই হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।

বর্তমান প্রায় ১৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে সরকারের। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া জনপ্রশাসনের শেয়ার ও ইকুইটি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিবহির্ভূত প্রকল্প খাতে জনপ্রশাসনে বিনিয়োগ রয়েছে। সব মিলে ২০২০-২১ অর্থবছরে জনপ্রশাসনে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা, এটি মোট বাজেটের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৪০ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা খাতেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আম্পান ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ খাতের অবকাঠামো অনেক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে আগামী বছর শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে পরিচালনা ও উন্নয়ন উভয় খাতে সরকার ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে, এটি মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ। এ ব্যয় চলতি বছরের তুলনায় ৮ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। চলতি বছরে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

আগামী বছরে বরাদ্দ বাড়লেও খুব বেশি নয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। কারণ সরকার এই মুহূর্তে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। এ বছর অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে স্বাস্থ্য খাত। ফলে আগামী দিনে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে মোট বরাদ্দ থাকছে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, যা চলতি বছরে আছে ২৬ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। সবশেষ বরাদ্দ বাড়ানোর তালিকায় আছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা এবং চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৫৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

যেসব খাতে বরাদ্দ কমছে : ২০২০-২১ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বছরে এ খাতে ৪০ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আগামী বছরে বরাদ্দ থাকছে ৩৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। একইভাবে বরাদ্দ কমানো হয়েছে গৃহায়ন খাতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ কমছে ৫১০ কোটি টাকা। নতুন বছরে এ খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরে রয়েছে ৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ বরাদ্দ কমার তালিকায় আছে শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস খাত। এ খাতে মোট বরাদ্দ কমছে ৭৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে ৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর