• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

মূর্তি-পূজা: ইসলাম কেন বিরোধিতা করে?

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

ইসলাম শান্তির ধর্ম। একত্ববাদের ধর্ম। এক আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ইবাদত ছাড়া আর কারো ইবাদত বিশ্বাস করে না। সকল চাওয়া পাওয়া তাঁর কাছেই।    আমাদের আল্লাহর দিকে মাথা ঝুঁকাতে হবে। যেমনিভাবে মূর্তি পূজা ভুল, তেমনিভাবে তাজিয়া পূজা ও কবর পূজাও ভুল। দুনিয়ার সকল মানুষ ওই মহান স্রষ্টার প্রতি মুখাপেক্ষী, যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আর যারা কিছুই সৃষ্টি করেনি তারা কি সমান হতে পারে?    কখনোও নয়। তিনি সব কিছুকে অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। মৃত্যুর পর বিচারকও হবেন, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন। আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। তিনি সব কিছুতেই সক্ষম।   হিন্দুদের কিছু লোক বলে, মানুষ এবং সকল সৃষ্টির মাঝে আল্লাহ তায়ালার মহত্ত বিদ্যমান আছে। যদি এসব আল্লাহর অস্তিত্বের অংশ হত, তাহলে জান্নাত ও জাহান্নাম, স্বর্গ-নরকের অস্তিত্ব থাকত না। কেননা আল্লাহর অস্তিত্বের একটি অংশ দোযখে জ্বলবে। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের হাস্যকর ধারণা। মৃত্যুর পর প্রতিদান ও শাস্তির ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণাদি বিদ্যমান আছে। মৃত্যুর পর রুহ বা আত্মা আল্লাহর কাছে ফিরে যায়। যা হিন্দুদের গ্রন্থেও বিদ্যমান। কখনো অসীম হতে পারে না, যদি আমাদের সসীম চিন্তা আল্লাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারত। তাহলে তো অসীম হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো জিনিস তার সাদৃশ্য নেই।’   স্রষ্টা সম্পর্কে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ  ও কোরআনের ভাষ্য একই। কোরআনে বলা হয়েছে, যেদিকেই ফিরবে সেদিকেই আল্লাহ তায়ালার চেহারা।..(বাকারা ১১৫)। রিগবেদ আছে ; তিনি চতুর্দিকে আছেন, তার চেহারা সর্বদিকে। তিনি একক। একত্ববাদের দাবি এ বিশ্বাসও রাখা যে, এই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পৃথিবীর সকল জিনিস শেষ  হয়ে যাবে। মহাপ্রলয় বা কিয়ামত সংগঠি হবে। ইনসাফের দাবিও হলো তা প্রতিষ্ঠিত হওয়া।   যেমন কোনো ব্যক্তি তিনজনকে হত্যা করে ফেলল। এর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো তার জানটিকে শেষ করে দেয়া। কিন্তু জান তো হলো একটি। একজনের পক্ষ থেকে বিচার হলো, বাকি দু’জনকে হত্যা করার জন্য তার বিচার কীভাবে হবে? এজন্যই আল্লাহ তায়ালা আখেরাতে এর বিচারের ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন। (নরকে) জাহান্নামে তার তিন হত্যার বিচার করা হবে। তদ্রুপ কোনো ব্যক্তি ভালো আমল করে, তার প্রতিদান স্বরূপ রাখা হয়েছে জান্নাত। সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে হবে। সেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। যেমন মায়ের পেটে দ্বিতীয় বার প্রবেশ করা অসম্ভব।   মানুষ পুনর্জন্ম বিশ্বাস করলে কয়েকটি প্রশ্ন দেখা দেয়। যার উত্তর কোনো হিন্দু ভাইও দিতে পারে না। প্রথম প্রশ্ন সাইন্স বলে, পৃথিবী যখন বানানো হয়, তখন প্রথমে জীব জন্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর গাছপালা, তরুলতা অস্তিত্বে এসেছে। এরপর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে, যখন মানুষই ছিল না জীবজন্তু কোন পাপের কারণে দুনিয়াতে এসেছে?   দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠে, হিন্দুদের বর্ণনা অনুযায়ী যুগ ছিল সত্য। উদাহরণস্বরূপ সত্য যুগে জনসংখ্যা ছিল ১০,০০০। যদি সকলেই ভালো হয় তাহলে  ১০,০০০ তো এখনো থাকা উচিত। যদি পূর্বের দশ হাজারের মধ্যে কিছু লোক খারাপ ছিল তাহলে জন্ম সংখ্যা হিসেবে জনসংখ্যা কম হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর উল্টো। পূর্বের তুলনায় জনসংখা বেড়েই চলছে। তাহলে এটা আবার কীভাবে সম্ভব? এতে বুঝা গেল, পুনর্জন্মের এই ধারণা সঠিক নয়।   তৃতীয় প্রশ্ন হলো, পুরো দুনয়ার সকল মানুষ ভালো হতে চায়, আর সকলেই যদি ভালো হয়ে যায়, তাহলে শাক-সবজি কোথা থেকে আসবে। নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ কি জালিম? (কখনো নয়) এমনটি নয় যে তিনি একদিকে মানুষকে ভালো হতে বলবেন, আবার অন্য দিকে ভালোও হতে দিবেন না। এটা অসম্ভব। যখন খাবারের কোনো জিনিস থাকবে না তখন এমনিতেই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। এমন স্ববিরোধ? কেমন ধর্ম? মোটকথা এই কথা দ্বারা বুঝা গেল যে, এই পুনর্জন্ম বিশ্বাস সঠিক নয়। আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আল্লাহ তায়ালা একই দেশে একই যুগে বিভিন্ন আকার আকৃতিতে আসেন, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ও অন্যান্য দেশের লোকের কী অবস্থা হবে?   যদি সবকিছু আল্লাহর অস্তিত্বের অংশ মনে করি, তাহলে পাপীকে শাস্তি দেবেন, বা নরকে জ্বালাবেন কেন? এমনটি সঠিক নয়। দুনিয়ার সব কিছু আল্লাহ তায়ালা নিজেই পরিচালনা করেন। কিন্তু কিছু কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং সঠিক পথ দেখানোর জন্য রাসূল বা দূতদের পাঠিয়েছেন। যাতে মানুষ এক আল্লাহরই উপাসনা করে। এজন্যই আদি পিতা আদম (আ.)-কে সর্বপ্রথম রাসূল/নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন। দুনিয়াতে যারাই দাবি করেন, আমাদের ঐশী জ্ঞান আছে তাদের প্রত্যেকের গ্রন্থে শেষ নবীর আলোচনা বিদ্যমান আছে। শেষ নবীর আলোচনা তাওরাত, ইঞ্জিল, বৌদ্ধ ধর্ম ও কোরআনে পাওয়া যায়। এ সবগুলো পৃথক পৃথক ভাষায়, যার একটিই অর্থ হয়, মুহাম্মাদ।   এমনিভাবে বেদে মুহাম্মাদ (সা.) এর আলোচনা এসেছে (অর্থ: বেদ-১২৭:২০, রিগবেদ-২:৩:২, রিগবেদ- ২:৫:৫, রিগবেদ- ৩:১৩:১)। আমাদের পিতা আদম (আ.) এর দিকে চিন্তা করি। তিনি যেই ধর্ম নিয়ে এসেছিলেন সেটি হলো ইসলাম। আরবিতে ইসলাম বলা হয়েছে। বাংলায় যাকে বলে আত্মসমর্পণকারী ধর্ম। আমাদের সকলের পিতা-মাতা একজন। আমাদের ধর্মও একটি। আর আপনি সে যুগেই রয়ে গেছেন। আর সর্বশেষ নবী ‘নরাশংশ’ মুহাম্মাদ (সা.)-কে চিনেননি ও মানেননি। আমরা তার ওপর আস্থা রেখে ঈমান এনেছি।    মোটকথা, আমরা কারো ধর্ম পরিবর্তন করছি না বরং  ভুলে যাওয়া সবক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। যাতে আপনি সঠিক ধর্মে চলে আসেন এবং ওই ধর্ম থেকে ফিরে আসেন যা নিজেদের জন্য বানিয়ে নিয়েছেন। তাই আমি আপনাদের মাথা থেকে একথা বের করতে চাই যে, ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ (সা.)-ই নন, বরং ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মানবজাতির আদি পিতা আদম (আ.)। মুহাম্মাদ (সা.) এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম পূর্ণতা লাভ করেছে। এজন্য আপনি তো অর্ধেক মানেন। আর যদি শেষ নবীকে না মানেন, তাহলে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। আধুরা মানুষ হয়ে থাকতে হবে। না এ দিকে, না ওদিকে।   হিন্দুদের ধর্মে যে খারাবিগুলো এসেছে, এসব তার স্থানে ঠিক। এই জন্য যে,  মুহাম্মাদ (সা.) এর অনুসারীগণ মাত্র ১৪ শ বছর পরে তাদের মাঝে কবর পূজা এসে গেছে। তাহলে হিন্দুদে এখানে হাজার বছর পর মূর্তি পূজা হয় এতে আশ্চর্যের কী আছে? কিন্তু তখন আশ্চর্য লাগে যখন কোনো  হিন্দুকে হিতাকাক্সক্ষী তাকে তার ভুলে যাওয়া পথের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন সে মুহসিনকে দুশমন মনে করে। অথবা মনে করে যে, সে আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে। হ্যাঁ, এই যুগ অবশ্যই ধোঁকার যুগ। কিন্তু সতর্ক করিয়ে দেয়ার পর তার ওপর চলতে অসুবিধা কিসের?    তাই এক আল্লাহকে উপাস্য হিসেবে মেনে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী স্বীকার করে তার ওপর অর্পিত হুকুমগুলোর আমল করার অঙ্গিকার নিয়ে মুর্তিপূজারিদের মুসলমান হয়ে যাওয়া আল্লাহর আহ্বান। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর