• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

সর্বোচ্চ পদে থেকে দুর্নীতি, বিএনপির রাজনীতি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২১  

নিজের নামে অবৈধভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, স্ত্রীর নামে খাল আর পুত্রের নামে জমিদখলের মধ্য দিয়ে বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সৃষ্টি করেন এক রাজকীয় অনিয়মের ইতিহাস। সাংবিধানিক সর্বোচ্চ পদে আসীন থেকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন-কানুনকে লংঘন করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগমের নামে খাল বরাদ্দ নিয়েছেন। 
জোট সরকারের শাসনামলে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে নিজের নামে করেছেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল। মুন্সীগঞ্জে ইউনিভার্সিটি স্থাপনের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন পরও সেখানে কোন ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয়নি। পুত্রের নামে জোরপূর্বক রাজধানীর কুড়িলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জমিদখল করা হয়েছে। পুত্রবধূর চা বাগানের জন্যও জমিদখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি কাজেই হয়েছে সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতি।
রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা নিয়েও ক্ষমতার অপব্যবহারের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। সীমাহীন অনিয়ম আর প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ ছাড়াই মন্ত্রণালয়সহ ঘাটে ঘাটে তড়িঘড়ি অনুমোদন দিতে বাধ্য করা হয়। মুন্সীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা হলেও অদ্যাবধি তা হয়নি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দু’দফায় ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জে জমি নেয়া হয়েছে। এ দুটি জমির মধ্যে নিচু এলাকা এবং খালের জমি রয়েছে। সর্বোপরি পদে পদে অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৩ বছরে একবারের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্ত করতে দেয়া হয়নি। শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠা নামে এহেন সব ঘটনা ছাপিয়ে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. আনোয়ারা বেগম একুশে পদকও পেয়েছেন। এভাবেই রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ হয়।
রাষ্ট্রের প্রধান এবং তার পরিবারের সদস্যরা যদি ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন।
এছাড়া ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের সভাপতি এবং স্ত্রী ড. আনোয়ারা বেগমের নামে বন্দোবস্ত দেন মোহাম্মদপুরের বিশাল খাল। স্কুলের পক্ষে অধ্যক্ষ ফারহানা হক ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ জোট সরকারের আমলে ওই বন্দোবস্ত নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের সহকারী সচিব আবদুল মতিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি সচিবকে চিঠি দেন। ৪০ ফুট প্রশস্ত রাজধানীর পানি চলাচলের অন্যতম মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুরের খালের এক বিঘা এলাকা ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় স্ত্রীর নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে নিবন্ধন করিয়ে নেন। পাশাপাশি জমির মালিককে তাদের দখলও বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে ওই খালের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করে সেখান থেকেও কিছু জমি স্কুলের নামে ইজারা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এজন্য রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. আনোয়ারা বেগম ওয়াসা বরাবর আবেদনও করেছেন।
এছাড়া স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও করেছেন ক্ষমতার অপব্যবহার। মুন্সীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অথচ বিদ্যালয়ের নামে দু’দফা ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জে জমি নেয়া হয়েছে। সেখানে নিচু জলাশয় ও খালের জমি রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রতিষ্ঠা করেননি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৩ বছরেও মঞ্জুরি কমিশনকে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত করতে দেয়া হয়নি। ইউজিসি যতবারই তদন্ত করতে চেয়েছে ততবারই চিঠি দিয়ে সময় নেয়া হয়েছে।
এছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একটি জমিও রাষ্ট্রপতি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সংযোগ সড়কে অবস্থিত এবং জোয়ারসাহারা মৌজার ৬নং প্লটের ১৭০৩ দাগে রেকর্ডকৃত। বিমানবন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিটির খতিয়ান ও বিএস জরিপ সবই রয়েছে সিভিল এভিয়েশনের নামে। কিন্তু ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ঢাকা সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাষ্ট্রপতির পুত্র ইমতিয়াজ আহম্মেদ বাবু জমিটি দখল করে নেন।
রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পুত্রবধূ কানিজ ফাতেমা ওরফে শ্যামা ম্যাডাম ঠাকুরগাঁওয়ের নিটলডোবা গ্রামে ৬০ বিঘা জমিতে চা বাগান করেছেন। এ গ্রামেই তিনি নিজ নামে মোট ২১০ বিঘা জমি কিনেছেন।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতির পুত্রবধূর ঠাকুরগাঁওয়ে আত্নীয় থাকার সুবাদে শ্যামা ম্যাডাম এখানে বিজনেস ফার্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নিটলডোবা গ্রামে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২১০ বিঘা জমি কেনেন। এ গ্রামেই চা বাগান ও হাঁসের খামার গড়ে তোলা হয়েছে। চা বাগানকে ঘিরে এখানে রেস্ট হাউস ও অফিস স্থাপন করা হয়।
নিটলডোবা গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইউসুফ আলী (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এখানকার কৃষকদের কাছে জোরপূর্বক আবাদি জমি নেয়া হয়েছে। 
একুশে পদক ২০০৬
রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হওয়ার সুবাদে অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম ২০০৬ সালের একুশে পদকও লাভ করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ওই পদক দেয়া হয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর