• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নিভৃতপল্লীতে তৈরি হচ্ছে জামদানি শাড়ি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪  

ফরিদপুরের নিভৃতপল্লীতে অনেকটা নিরবেই চলছে জামদানি শাড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞ। ঈদকে সামনে রেখে এখন পুরোদমে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানার শ্রমিকেরা। একদিকে করোনায় কাজ হারানো অন্যদিকে পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলে শিল্পায়নের হাতছানি; এ দু’টি সমস্যা ও সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই মাত্র দুই বছর আগে এখানে গড়ে ওঠে এই জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানা। এখন সেখানে নারী ও পুরুষ জামদানি শাড়ি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর বিরুপ পরিস্থিতি সাধারণভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ঘরে বাইরে সর্বত্র; তবে এই করোনাকালের লকডাউনই যেনো ছিলো আলফাডাঙ্গার পানাইল গ্রামে জামদানি শাড়ি তৈরির এই নতুন দিগন্তের শুভ সূচনার আশির্বাদ। পানাইল গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মো. মোস্তফা রহমান জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। লকডাউনের সময় যখন রূপগঞ্জে জামদানি শাড়ির কারখানাগুলো কাজের অভাবে বন্ধ হওয়ার দশা; তখন ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে গ্রামেই জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দুই বছর আগে নিজের বাড়িতে টিনের একটি জরাজীর্ণ ঘরে প্রথমে একটি তাঁতযন্ত্র বসিয়ে শুরু হয় পথচলা। পরিচিত দু'একজন কারিগরদের সঙ্গে নিজের স্ত্রীকেও এ কাজে নামান। আর চাহিদা থাকায় বাড়তে থাকে তাদের কাজের পরিধি। কোনো সরকারি দফতর বা সংস্থার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই এখন এগিয়ে চলছে মোস্তফার এই জামদানি শাড়ির কারখানা। এখন তার কারখানায় ছয়টি তাঁতযন্ত্রে বোনা হচ্ছে জামদানি শাড়ি। এখানকার তাঁত শ্রমিকেরা জানান, তাদের কারো আগে থেকে মোস্তফা রহমানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা। কারো বা এখানে স্বামীর সঙ্গে কাজ শেখা। কয়েকটি কিশোর একেবারে নবীন হিসেবে কাজ শিখছেন। মোট ১২ জন শ্রমিক রয়েছেন এই কারখানায়। তবে শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক তেমন মিলছে না তাদের। থাকা ও খাওয়া বাদে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা মজুরি মিলে তাদের। মোস্তফা জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে সুতা কিনে আনেন। প্রতিটি শাড়িতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং অনেক সময় দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার সুতা প্রয়োজন হয়। একটি শাড়ি বুনতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যায়। বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। সেই শাড়ি ঢাকার বিভিন্ন দোকান ও বিসিকে বিক্রি করেন। মোস্তফা রহমানের স্ত্রী লিপি সুলতানা বলেন, এই কারখানা চালুর পরে স্বামীর সঙ্গে কাজ করছি। যখন তিনি ঢাকায় যান শাড়ি বিক্রি করতে তখন তার অবর্তমানে আমি এসব দেখাশোনা করি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে ঢাকা যেতে আর আগের মতো সময় লাগে না। তাই এখানেই এই কারখানা দিনে দিনে বাড়ানোর কথা ভাবনা চিন্তা করছি। শেরপুরের বাসিন্দা ও জামদানি শাড়ি তৈরির কারিগর আতিকুল হোসেন বলেন, অনেকদিন মোস্তফা রহমানের সঙ্গে কাজ করেছি। পরে যখন তিনি এই কারখানা দেন তখন আগের কারখানা ছেড়ে এখানে এসেছি। তিনি বলেন, করোনার পরে এমনিই বাজার মন্দা ছিলো। তবে আস্তে আস্তে কাজ বাড়ছে। এখন সরকার আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দিলে এখানেও গড়ে উঠতে পারে জামদানি পল্লী। আরেক শ্রমিক ফরিদপুরের কানাইপুরের বাসিন্দা ইমন বলেন, এখানে দুই বছর ধরে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করছি। সামনে ঈদ। বেতন-বোনাস নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাবো। ঈদে যাতে বেশি শাড়ি বুনতে পারি এ কারণে দিনরাত মিলিয়ে সমান তালে কাজ করছি। কারখানা মালিক মোস্তফা রহমান বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন তাঁত পল্লীতে কারিগর হিসেবে কাজ করেছি। ২০২০ সালে করোনা কালীন সময়ে বাড়িতে এসে প্রথমে একটি তাঁত বসিয়ে জামদানি শাড়ি বুনতে শুরু করি। এখন ছয়টি তাঁতে ১২ জন শ্রমিক কাজ করে। মোস্তফা রহমান আরো বলেন, কারখানাটি গড়ে তুলতে খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার মতো। এখন শ্রমিকের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ টি জামদানি শাড়ি বুনতে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। আর শাড়িগুলো বিক্রি করে সব খরচ বাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ইনকাম হয়। বিভিন্ন ধরনের ও দামের শাড়ি রয়েছে। সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে শুরু, ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার শাড়িও তৈরি করা হয়। শাড়িগুলো বুননের পর ঢাকায় বিসিক, তাঁতপল্লীসহ বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করি। আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ মোস্তফা রহমানের এ উদ্যোগকে খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, অনেকটা নিরবেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পোদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বিসিকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করবে এটিই প্রত্যাশা। যাতে তারাও পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে নিযুক্ত থাকতে পারেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর