• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বশেমুরবিপ্রবিতে শোভা পাচ্ছে ৫০ ফুটের জীবন্ত নৌকা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারি ২০২৪  

আবহমান বাংলার জনপদে জড়িত এক বাহন নৌকা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় মানুষের সঙ্গে মিশে থাকা বাহন হিসেবে নৌকার জুড়ি নেই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি কিংবা জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাস থেকে শুরু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতো মহাকাব্যেও রয়েছে নৌকার বন্দনা। কালের বিবর্তনে ইতিহাসের বুক চিরে আজও নৌকা বেয়ে চলেছে কাল থেকে মহাকালের উজানে। 
স্বাধীন বাংলাদেশের পটভূমিতে নৌকার অনবদ্য অবদান অনস্বীকার্য। আর সেই অবদানকে জীবন্ত স্মরণীয় করে রাখতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) বানানো হয়েছে জীবন্ত শ্যামলিমা ঘেরা নৌকা। বছরের পর বছর চিরহরিৎ রূপের বাগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নীরবে ছড়িয়ে যাচ্ছে তার জীবন্ত শোভা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্নে এই নৌকা বানানো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তারই দলের প্রতীক ধরে রাখতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে সময়ে লোহার রড সারিবদ্ধ ঝালাই করে নৌকাটির ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট বিশালাকায় নৌকার কাঠামো তৈরি হয়। পরে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্নে এটি স্থাপন করে দুপাশ দিয়ে স্টার জুঁই গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়। নিবিড় পরিচর্যায় গুল্মলতার এই গাছগুলো তিন মাসের মধ্যে আপন লতা ছড়িয়ে নৌকার ঐ অবয়বটিকে জীবন্ত নৌকার রূপ দেয়। অন্যদিকে সৌন্দর্য বর্ধনে একইসঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় নৌকা প্রতিকৃতির দুপাশে তৈরি করা হয় ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের জিরাফ ও হাতির দুটি প্রতিকৃতি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজে সন্নিবেশিত তিন জীবন্ত প্রতিকৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যে অনন্য মাত্রা যোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট পেরিয়ে প্রশাসনিক ভবনে দিকে রওনা দিতেই প্রথমে চোখে পরে জীবন্ত এই প্রতিকৃতিগুলো। 

চারপাশে বিভিন্ন মৌসুমের ফুল আর রং-বেরঙের পাতাবাহার গাছ জায়গাটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাদরে ঢেকে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারাদিন ক্লান্তি শেষে সাময়িক বিনোদনের জন্য ছুটে আসে এই প্রাঙ্গণে। স্যুট, টাই ও জুতো পরা ছাত্ররা আর রং-বেরংয়ের শাড়ি পরা ছাত্রীদের প্রেজেন্টেশন আর ভাইভা শেষে এই নৌকার সামনে এসে ছবি না তুললে যেন সব অপূর্ণ থেকে যায়। দিন পেরিয়ে রাতে গার আঁধারে চলে আড্ডাবাজ শিক্ষার্থীদের কোলাহল। তাদের তারুণ্যের উচ্ছ্বসিত বীর্যবান শক্তির আঁচড়ে এ প্রাঙ্গণে প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে।

এ বিষয়ে স্টেট কর্মকর্তা সৈয়দ আনিসুস সাদেক বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিয়ত সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি। ২০১৮ সালে এই অবয়বগুলো তৈরির পর থেকে আমাদের স্টেট শাখা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ইমদাদুল হক শরীফ বলেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে প্রতিহত করে জাতির পিতার জন্মভূমিতে তারই নামে নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌকা আদলে যে প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে, তা গোপালগঞ্জবাসীর ঐতিহ্যকে ধারণ করে। 
তিনি আরো বলেন, শত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও মানুষ এই নৌকাকে হৃদয়ে ধারণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর নৌকার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নাই, সেই ইতিহাসকে এটি প্রতিকীরূপে ফুটিয়ে তুলেছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি জায়গায় আমাদের সুদৃষ্টি রয়েছে। আর এই নৌকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের এই জায়গাটি যেন সর্বদা সুন্দর ও আকর্ষণীয় থাকে সে বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর