• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ভাতের ভিটা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৩  

মাগুরা সদর উপজেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত বেয়ে ফটকী নদীর উত্তর তীরবর্তী এক পল্লীগ্রাম টিলা। নামের সঙ্গে গ্রামের ভূ-প্রকৃতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পূণ্যস্থান হিসেবে আদৃত ভাতের ভিটা মাগুরা জেলা শহর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণের এই টিলা গ্রামে অবস্থিত। ‘ভাতের ভিটা’ স্থানটি দেখতে টিলার মত। কোনো এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী দরবেশ নিশিকালে এপথে ভ্রমণের সময় এখানে এসে মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। নির্মাণ কাজে নিয়োজিতদের জন্য ভাত রান্না করা হলেও তখনও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। এর মধ্যে ভোরের নকীব পাখ-পাখালীর কূঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে রাতের নিস্তব্ধতা। নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দরবেশ চলে যান।
অনেকের মতে, এখানে অলৌকিকভাবে এক রাতে একটি মসজিদ নির্মাণ হতে গিয়ে রাত্রি শেষে পাখি ডেকে উঠলে আর মসজিদটি তৈরি হয়নি। এখানে অনেক ভাত রান্না করে রাখা হয়েছিল তাই সেখানকার নাম হয় ভাতের ভিটা। 


হাড়ি-বাসন পরিষ্কার করা আবর্জনা যেখানে ফেলা হয়েছিল সেই স্থান জিয়ার হালি খাল নামে পরিচিত। মঘির দক্ষিণ পাশে যেখানে হাড়ি পরিষ্কার করার ঝিনুক ফেলা হয়েছিল সেখানে তৈরি হয় ঝিনেই হালি খাল। বলা হয় এটি ছিল জ্বীনদের কাজ। 

অনেকের অভিমত, ভাতের ভিটাসহ এই নামগুলো শুধুই কাল্পনিক নাম। পরবর্তীতে এখানে অনেক জঙ্গল জন্ম নেয়। এই ভিটায় একটি বড় বরই গাছ ছিল। বরই গাছটির পাতা বা ডাল কেউ কাটতো না, কাটার সাহসও পেত না। যদি কেউ কাটতো তাহলে গলা দিয়ে রক্ত উঠে সে মারা যেত অথবা তাদের ছেলেমেয়ে মারা যেত। এমন ধারণা সেই সময় প্রচলিত ছিল।

এই ভিটা কেউ খনন করার বা এর ওপরে জুতা পড়া অবস্থায় কেউ ওঠার সাহসও পেত না। এখানে অনেকে বিভিন্ন রোগ মুক্তির আশায় বিভিন্ন ধরনের মানত করতো। এখানে কেউ ভাত রান্না করে নিয়ে আসে, কেউ বাতসা নিয়ে এসে বিলি করে, কেউবা মোরগ-মুরগি এনে এখানে ছেড়ে দেয়। 


এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, পাকিস্তান সরকার আমলে পাকিস্তানি সেনারা এই ভিটা খনন করতে এলে তারা এটি খুঁড়তে সাহস পায়নি। অনেকে এখানে সেবা দিত, কেউ আবার এখানকার মাটি পবিত্র মনে করে খেত। বিষয়গুলো ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি হওয়ায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে পরবর্তীতে ফুরফুরা পীর সাহেব ফজলুল করিমকে এনে এটি খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি কোদাল দ্বারা কয়েক কোপ দিলে তার ২৫০ মুরিদ এখানকার জঙ্গল পরিষ্কার করে এবং ভিটাটি খনন করতে শুরু করে। 

এলাকাবাসীর বিশাস করেন, পীরের মাধ্যমেই জ্বীনেরা এই স্থান ত্যাগ করে ও বিভিন্ন ক্ষতিকর উপসর্গ থেকে এলাকাবাসী মুক্তি পায়। এই খননের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন খনন কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগে এটি খনন করা হয়। এখানে পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহারের সদৃশ কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়।


মাগুরা ইতিহাস ঐতিহ্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক ডা. কাজি তাসুকুজ্জামান জানান, এটি ২৩০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধদের একটি কীর্তি। এখানে বৌদ্ধ পুরোহিতগণ কক্ষগুলোতে উপাসনা করতো। ভাতের ভিটাকে ঘিরে এলাকায় বিভিন্ন লোকবিশ্বাস তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর