• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

কালের সাক্ষী দিনাজপুর কান্তজীউ মন্দির

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৪  

দিনাজপুর কাহারোল জেলায় ঐতিহাসিক কান্তজীউ মন্দির মুসলমান মিস্ত্রি দিয়ে নির্মাণের গল্পটা বাস্তবিক সত্য ঘটনার জনশ্রুতি রয়েছে। সম্প্রতি দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন এই তথ্য জানান। নিজের অনুসন্ধান ও গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, গবেষণা ও অনুসন্ধানে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য- উপাত্য দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার কান্তজীউ মন্দির নির্মাণের ঘটনা জনশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবিকতার প্রমান মিলে। কালের পরিক্রমায় অনেক তথ্য বিলীন হয়ে গেছে। তবে এই ঐতিহাসিক মন্দির নির্মাণের ঘটনা অনুসন্ধানে মুসলমান মিস্ত্রীরা মিশর থেকে তৎকালীন রাজা রামনাথ এর আহ্বানে সারা দিয়ে দীর্ঘ নদীপথ অতিক্রম করে এদেশে মন্দির নির্মাণের জন্য এসেছিলেন। ওই মুসলিম মিস্ত্রীরা যতœ সহকারে তাদের হাতের কারুকার্য দিয়ে এই ঐতিহাসিক মন্দির নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এর অন্যতম সাক্ষী কান্তজীউ মন্দিরের পাশে অবস্থিত নয়াবাদ মসজিদ। মসজিদের স্থানে রয়েছে সেই চকরামপুর মিস্ত্রিপাড়া। যেখানে এখনো মসজিদ নির্মাণকারী হেড মিস্ত্রি নেয়াজ আহমেদ ওরফে কালুর কবর ও তার রেখে যাওয়া বংশধর বসবাস করছে। এই অস্তিত্বই ওই ঘটনার বাস্তব সাক্ষী দিচ্ছে। তিনি বলেন, ১৭২২ সালে রাজা প্রাণনাথ কান্তনগরে একটা মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি যে রকমটা চান, দেশীয় মিস্ত্রিরা তেমনটা পারদর্শী নয়। টেরাকোটার কাজে সিদ্ধহস্ত লোক প্রয়োজন। মুঘলদের স্থাপত্য মাথায় রেখে তিনি মিস্ত্রি আনালেন সূদুর মিশর থেকে। মন্দির বানানোর সব কারিগরই হচ্ছেন মুসলমান। তবে পরম যতœ সহকারে কাজ করতে লাগলো মিস্ত্রিরা। কিন্তু তারা মুসলিম, দিনে ৫ বার নামাজ পড়তে হয়, বিশ্রামও দরকার। তাই সাহস করে একদিন তাদের সর্দার নেয়াজ, ওরফে কালু মহারাজার দরবারে গিয়ে মসজিদের জন্য জায়গা চেয়ে বসেন। মহারাজ প্রাণনাথ উদারচিত্তে ১ দশমিক ৫ বিঘা জমি দিয়ে দেন নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণের জন্য। কান্তজীউ মন্দিরের জন্য যে ইট,পাথর ও সরঞ্জাম ছিলো, তা দিয়েই গড়ে উঠে নয়াবাদ মসজিদ। দিনাজপুর ঢেপা নদীর স্রোতের দুপাশে এখনো বাংলার হাজার বছরের সেই ধর্মীয় সম্প্রীতিকে বুকে ধারণ করে আছে কান্তজীউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ । এখন মন্দির দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলিম আসেন, মসজিদ দেখে যান শত শত হিন্দু। এলাকার মানুষগুলো এখনো বোঝেন না বিভেদের সমীকরণ, চেনেন না ধর্মের রাজনীতি। তাঁরা শুধু ভালোবাসতে জানেন, পাশে থাকতে জানেন। তিনশো বছর পেরিয়ে গেছে, হয়তো আরও হাজার বছর পেরিয়ে যাবে, কিন্তু পৃথিবীর বুকে সাক্ষী হয়ে থেকে যাবে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ। ভাঙতে পারবে না কোন সাম্প্রদায়িক বন্ধন। সবাই একসাথে মিলেমিশে বসবাস করবে, এটাই বাঙালির ঐতিহ্য।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর