• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বিলুপ্তির পথে আদিবাসীদের ঐতিহ্যের পোশাক

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৩  

কালের পরিক্রমা আর যুগের বিবর্তনে শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বাহারি রঙের পোশাক আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার গারো পাহাড়জুড়ে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা মেলে না সেই ঐতিহ্যের পোশাক-পরিচ্ছদ পরা নারী-পুরুষ ও যুবতীদের। আদিবাসী নেতারা বলছেন, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক সংকট, সুতার মূল্য বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কর্মীর অভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ঐতিহ্যের পোশাক।

জানা যায়, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুর সীমান্তের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী- এ ৩টি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এখনো অর্ধলক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এর মধ্যে গারো, কোচ, হাজং, বর্মণ, বানাই, ডালু ও হদি- এ ৭টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইইডির তথ্যমতে, জেলায় গারো সম্প্রদায়ের ১৬ হাজার ৫শ’, বর্মণ ১৭ হাজার, হদি ১০ হাজার ৬শ’, হাজং ৪ হাজার ৭শ’, কোচ ৩ হাজার ৫শ’, ডালু ১১শ’ ও বানাই সম্প্রদায়ের ১১০ জন মানুষ বসবাস করছেন। 
বুধবার সরেজমিনে গেলে কথা হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া গ্রামের আদিবাসী নেতা যুগল কিশোর কোচ, জাগেন্দ্র কোচ, বাকাকুড়া গ্রামের ধীমান চন্দ্র কোচসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, একসময় তাদের ছিল জমিজমা, গোয়ালভরা গরুসহ ফসলাদিতে ভরপুর। কিন্তু কালের আবর্তে সবকিছু হারিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখন ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। তারা বলেন, অতীতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজের হাতে তৈরি বাহারি রঙের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে ব্যবহার করে আসছিলেন। কোচ সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি বাহারি রঙের কাপড়ের পোশাকের মধ্যে রয়েছে লেফেন, বাশেক, উড়না, গারো সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোশাকের মধ্যে দকমান্দা, দকশাড়ি, উড়না। তবে হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন কোচ সম্প্রদায়ের পোশাকই নিজ হাতে তৈরি করে পরিধান করে থাকে। তবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোশাক দিনে দিনে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রবেতা ম্রং বলেন, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক সংকট, সুতার মূল্য বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কর্মীর অভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন আগের মতো আর পোশাক তৈরি করতে পারছে না। আর উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশী বলেন, অতীতে সবাই তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাপড় তৈরিতে অভ্যস্ত ছিল। তারা মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের লোকজন এসব বাহারি রঙের পোশাক তৈরি করতে না পারার কারণে দিনে দিনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের খুব একটা দেখা মিলছে না। একই কথা জানিয়ে শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সকল প্রতিকূলতার মাঝেও কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনো তাদের ঐতিহ্যের পোশাক ধরে রেখেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বিয়েশাদিতে এখনো কম হলেও চোখে পড়ে ওইসব বাহারি রঙের পোশাক। তার মতে, সরকারিভাবে অর্থনৈতিক জোগান পাওয়া গেলে আবারও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাঝে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে। 
এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকতাদিরুল আহমেদ বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জীবনমানের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। তারই আওতায় তাদের নানাভাবে সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। তাদের রঙ-বেরঙের নানা পোশাক আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিরই অংশ। কাজেই ঐতিহ্যের সে পোশাক ধরে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর