• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে বৃহত্তর তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ মে ২০২১  

নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরের অতিরিক্ত এক লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে সেচের পানি নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সোমবার দুপুরে রংপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রষাদ ঘোষ।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের নিবিড়তা ২৩১ শতাংশ থেকে ২৬৮ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। ৫ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের অধিকতর উন্নতিকরণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

প্রকৌশলী জ্যোতি প্রষাদ ঘোষ বলেন, মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী- তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের সর্বমোট এলাকা সাত লাখ ৫০ হাজার হেক্টর এবং সেচযোগ্য এলাকা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর। প্রকল্পটিতে এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ের আওতায় সেচ কাঠামোসহ প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার হেক্টর কমান্ড এলাকায় সেচ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর কমান্ড এলাকায় আরো চার লাখ ২৮ হাজার ৫৯৪ হেক্টর সেচযোগ্য এলাকা সেচ সুবিধার আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন সুবিধাসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার সেচখাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুরের ১২টি উপজেলায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আমন মৌসুমেও সম্পূরক সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকল্প এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বার্ষিক গড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি বছর ডিজেল সাশ্রয় হয়েছে এক কেটি ১৩ লাখ লিটার, যার বাজার মূল্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। ফসলের নিবিড়তা ১৮০ ভাগ থেকে ২৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর এলাকাভেদে ১ মিটার থেকে ৩ দশমিক ৫০ মিটার উপরে ওঠায় বনায়ন বৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীণ নদী সমূহে সারা বছর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্প এলাকা আর্সেনিক মুক্তও হয়েছে।

আরো বলা হয়, প্রধান সেচ খালসমূহের উভয় ডাইকে ব্যাপক হারে বনায়নের ফলে দেশীয় পাখির বংশবৃদ্ধি ঘটেছে এবং পরিযায়ী পাখির আগমন বেড়েছে। এতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৩০ কিলোমিটার সেচখাল, ৪৫ হেক্টর এলাকা সিল্টট্রাপে মৎস্য চাষ হচ্ছে। অপরদিকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সেচখালের ডাইক প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ৭৪ কিলোমিটার প্রকল্প সড়ক এবং তিস্তা প্রধান খাল, বগুড়া সেচখাল ও দিনাজপুর সেচখালের উপর দিয়ে নির্মিত মোট ৬৭ কিলোমিটার পরিদর্শন সড়ক জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রষাদ ঘোষ বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে উক্ত এলাকার দরিদ্রতার হার ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মাটি নির্মিত সেচ খালসমূহ ভাটির দিকে যাওয়ায় সেচযোগ্য এলাকা ৮৪ হাজার হেক্টর থেকে ৫০ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সেচ খালসমূহের ডাইক পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ এবং নতুন সেচযোগ্য এলাকা প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর বৃদ্ধিকরণসহ মোট সেচযোগ্য এলাকা প্রায় এক লাখ ৪ হাজার হেক্টরে এ উন্নীতকরণের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর