• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

চা চাষে ঝুঁকছেন রংপুরের কৃষকরা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৩  

রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা এবার তামাকের পরিবর্তে চা চাষে ঝুঁকছেন। এখন তারা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করেছেন। এর ফলে কৃষকদের সঙ্গে চা কারখানার প্রতিনিধিদের ব্যবসায়িক যোগাযোগ বেড়েছে। চা-পাতা বিক্রি নিয়ে কৃষকদের কমেছে দুর্ভোগ।
চা উৎপাদন ও বাগান বৃদ্ধির বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে রংপুর কৃষি বিভাগ। গত বছর রংপুরের ছয় একরের বাগানে ৫০ হাজার কেজির বেশি চা উৎপাদন হয়েছিল বলে জানিয়েছে চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।


২০১৮ সালের নভেম্বরে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা সঞ্চয় রায় ১ একর ২০ শতক জমিতে চায়ের বাগান করেছিলেন। বাগানে দেশী জাতের ৯ হাজার চা-গাছ রয়েছে।

তিনি জানান, চা-বাগানে চারা রোপণের শুরুতে তার খরচ হয়েছিল তিন লাখ টাকা। বছরে প্রতি ধাপে দুই হাজার কেজি করে পাঁচ দফায় ১০ হাজার কেজি চায়ের পাতা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন। বাগান পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বছরে তার ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান।


সঞ্চয় রায় বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় চা-য়ে রোগবালাই কম হয় এবং সময় মতো রোগ নির্ণয়ে ওষুধের ব্যবস্থা করলে গাছ দ্রুত ভালো হয়ে যায়। চা-গাছ পরিচর্যার জন্য শ্রমিকদের দৈনিক ২০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। গত বছর প্রতি কেজি চা পাতা বিক্রি হয়েছিল ২৫ টাকা কেজি দরে। ধান, পাট, ভুট্টা থেকে চা আবাদে দ্বিগুণ লাভ হচ্ছে।

রংপুর সদর উপজেলার হরিদবেপুর ইউনিয়নের ডা. মীর হোসেন জানান, ২০১৮ সালের মে মাসে এক একর জমিতে চায়ের বাগান করেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানে ৬ হাজার ২০০টি গাছ রয়েছে। ২০২০ সালে প্রথম দফায় ৫০০ কেজি চায়ের পাতা সংগ্রহ করেন তিনি। ওই বছর আরো চারটি ধাপে প্রায় আড়াই হাজার কেজি চায়ের পাতা সংগ্রহ কনেন। এ ছাড়া ২০২১ সালে এক ধাপে এক হাজার কেজির বেশি এবং ২০২২ সালে প্রতি ধাপে দেড় হাজার কেজির বেশি চা পাতা সংগ্রহ করেন তিনি।

ডা. মীর হোসেন বলেন, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি কৃষি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা ছিল। ২০০০ সালে পঞ্চগড় জেলায় কিছুদিন থাকার সুবাদে চা চাষে আগ্রহী হই। আমি ৪৫ থেকে ৫৫ দিন পরপর গাছ থেকে চা পাতা সংগ্রহ করি। গাছের ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের কচি ডালসহ পাতা সংগ্রহ করা হয়। প্রতি কেজি পাতা উত্তোলনের জন্য তিন টাকা করে স্থানীয় প্রশিক্ষিত নারী শ্রমিকদের দেওয়া হয়। চলতি বছর প্রতি ধাপে দুই হাজার কেজির বেশি পাতা সংগ্রহ করা যাবে। এভাবে বছরে পাঁচ ধাপে চায়ের পাতা সংগ্রহ করা যায়। 

তিনি আরো বলেন, পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর নার্সারি থেকে বিটি-২ জাতের চায়ের চারা সংগ্রহ করে বাগানে রোপণ করেছি। বাগানের জমি প্রস্তুত। চারা ক্রয় ও শ্রমিকের মজুরিসহ সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন প্রতি বছর বাগান পরিচর্যার জন্য ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। বর্তমানে বছরে দুই লাখ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন খামার সহকারী জাহিদ ইমাম সিদ্দিকি বলেন, রংপুর সদর ও তারাগঞ্জে প্রায় ছয় একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। ২০২২ সালে রংপুরে সবুজ (কাঁচা) চা পাতা উৎপাদন হয়েছে ৫০ হাজার কেজি। সিনহা গ্রুপ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ ও রংপুরের তারাগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করেছে। রংপুরের মাটি চা চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন অনেক চাষি চা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই চাষিদের স্বার্থে রংপুরে চা বোর্ডের একটি লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, চা আবাদের বিষয়টি দেখাশোনা করে চা বোর্ড। আমরা তারাগঞ্জ ও রংপুর সদরের চা-বাগানের মালিকদের চা উৎপাদন নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। রংপুর জেলার মাটি চা চাষের জন্য মোটামুটি ভালো। যেহেতু পঞ্চগড় জেলায় চায়ের আবাদ ভালো হচ্ছে, তাই রংপুরেও চায়ের আবাদে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর