• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

অপরিপক্ব তরমুজে সয়লাব বাজার, দামও চড়া

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪  

অপরিপক্ব তরমুজে সয়লাব ঝালকাঠির হাট-বাজারগুলো। এসব অপরিপক্ব তরমুজ চড়া দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এসব তরমুজ পিস হিসেবে নিতে গেলে দাম চাওয়া হচ্ছে আকাশছোঁয়া। উচ্চবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে থাকলেও মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্য মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে রয়েছে। আর নিম্নবিত্তরা তো তরমুজের কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছে। ঝালকাঠি জেলায় নদী তীরবরর্তী বেলেমাটির ৭৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। ঝালকাঠির জেলায় চাহিদার তুলনায় তরমুজ উৎপাদন খুবই নগণ্য। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝালকাঠি জেলার হাট-বাজারগুলোতে আমদানি হয় তরমুজ। তরমুজ ক্রেতা আরমানুজ্জামান বলেন, তরমুজ দোকানের সহকারী বিক্রেতা আমাকে বলল, এই তরমুজটা নেন। প্রধান বিক্রেতা খানিকটা চমকে ওঠার ভঙ্গিতে বলল, স্যারকে ওটা দেয়া যাবে না এদিকে রাখ। এরপর সে দুটো তরমুজ হাতে নিয়ে থাপ্পর দিয়ে রেখে দিল। তৃতীয় নম্বরটা তরমুজে থাপ্পর দিয়ে তার সহকারীকে বলল, এটা প্যাকেট করে দে। বিক্রেতাদের এই সব স্যার (.... ভাই) সুলভ আচরণ সব সময় ভয় লাগে, হয় দাম বেশি রাখবে, না হয় জিনিস খারাপ দিবে। ডা. ফেরদৌস রায়হান জানান, তরমুজ কিনতে গেলে প্রথমেই খেয়াল করতে হবে তরমুজের গায়ে সাদা দাগ আছে কিনা! অপেক্ষাকৃত ছোট ও বাঁকা তরমুজ মিষ্টি ও রসালো হয় না। তাই তরমুজ কেনার সময় গোল বা ওভাল শেপের তরমুজ কিনবেন। তরমুজ কেনার আগে হাতে নিয়ে দেখবেন যদি ভারী হয় তবে কিনুন। হালকা বা ফাঁপা লাগে তবে সেটি কিনবেন না। তরমুজের গায়ে একটি অংশ হলদে রঙের হলে সেটা কিনবেন। তরমুজের গায়ে সাদা সাদা দাগ থাকলে সেই তরমুজ কিনবেন না। তরমুজের গোড়ায় শুকিয়ে যাওয়া অংশ থাকলে বুঝবেন সেটি ঠিক মতো পেকেছে। তাই এটি কেনা যায়। তরমুজ কেনার সময় টোকা দিয়ে দেখুন। যদি ভারী শব্দ আসে তবে কিনুন। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, এখন মোকামে তরমুজের সরবরাহ কম, দাম বেশি। বরিশাল অঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলাতে এবার প্রচুর তরমুজ হয়েছে। তবে এখনো মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় সব এলাকার তরমুজ আসছে না। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকায় এসব অপরিপক্ব তরমুজগুলোয় তাদের বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুন ইসলাম জানান, সাধারণত ডিসেম্বর মাসে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। মে মাসজুড়ে মাঠে তরমুজ থাকে। মে মাস হলো ভরা মৌসুম। পরিপক্ব তরমুজ উঠতে উঠতে চৈত্র মাস বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ হয়। কিন্তু চাষিরা দামের কারণে আগেভাগেই অপরিপক্ব তরমুজ তুলে বেশি লাভের আশায় বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় নদী তীরবর্তী বেলেমাটির ৭৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। বাজারের ফল ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, এখনো তরমুজের মৌসুম আসেনি। রোজার কারণে চাষিরা আগে ভাগে তরমুজ তুলে ফেলছেন। এখন বাজারে যে তরমুজগুলো দেখা যাচ্ছে, তা আকারে ছোট, ৩ থেকে ৫ কেজির মধ্যে বেশি। বড় তরমুজ নেই বললেই চলে। এসব তরমুজের বেশিরভাগই অপরিপক্ব। ক্রেতা মিরাজ হোসেন বলেন, রোজা বলেই বাজারে তরমুজ কিনতে আসলাম। তবে বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন। তাছাড়া তরমুজগুলো অপরিপক্ব। বেশি বড় হয়নি। বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে। সব দোকানেই একই দাম। আরেক ক্রেতা রোজিনা ইসলাম বলেন, তিনশ টাকায় আনুমানিক ৪ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনেছি। দামটা অনেক বেশি। দোকানদার একটু কমও রাখল না। বাড়ির বাচ্চারা বায়না ধরছে তরমুজ খাবে, কিছু করার নেই। যত দামই হোক কিনতে হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, রমজানের শুরু থেকেই আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আমরা যখন বাজার মনিটরিং করেছি, তখন তরমুজের বিষয়টিও মাথায় রাখছি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি তরমুজের বাজারেও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি এবং বিক্রেতাদের সতর্ক করছি। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও অপরিপক্ব তরমুজ কিনতে নিরুৎসাহিত করছি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর