• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

প্রত্যন্ত এলাকা আলোকিত করছে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪  

দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি (ডাস)। ১৯৯৮ সালে ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করে বেসরকারি এই সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত নানা ধরনের মানবিক কাজ করে চলছে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি। গ্রামীণ জনপদের মানুষের কল্যাণে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি পরিচালনা হচ্ছে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. ইউনুছের হাত ধরে। তিনি ১৯৭০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাল বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বর্তমানে পার্শ্ববর্তী ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুগঞ্জ বাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মো. ইউনুছ। সেখানেই দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির প্রধান কার্যালয়। অস্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নেয়া মো. ইউনুছ এক সময় নিজেও ছিলেন এনজিওকর্মী। তবে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির পথচলার মাধ্যমে তিনি ভাগ্য বদলে দিয়েছেন অনেকের। দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো. ইউনুছ জানান, ৯৮ সালের মার্চ মাসে সমাজসেবা থেকে রেজিস্ট্রেশন পায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা। রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ওই বছরই প্রশিকার সহায়তায় ২ বছর বয়স্ক শিক্ষার কাজ করি। তখন দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির মাধ্যমে লালমোহন উপজেলায় দুই হাজার আটশত স্বাক্ষরজ্ঞানহীন লোককে সাক্ষরতা শেখাতে সক্ষম হই। এরপর পুরো ভোলা জেলায় ২৩ হাজার লোককে সাক্ষরতা শেখানো হয়। তিনি জানান, ২০০২ সালে দাতা সংস্থার ফান্ডে কাজ করার সুযোগ পেয়ে এনজিও ব্যুরো থেকে রেজিস্ট্রেশন পায় দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি। এরপর কর্মপরিধি বৃদ্ধি করা হয়। ২০০২ সাল থেকে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ শুরু করি। সেই থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার প্রতিবন্ধীকে সরাসরি পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিয়েছি। এছাড়া উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোলা জেলায় এ পর্যন্ত ১৪ হাজার পাঁচশত ঝরে পড়া শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি। অন্যদিকে ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ভোলা জেলায় বিনামূল্যে সাতশত পঞ্চাশটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিশ্চিত হয়েছে বিশুদ্ধ পানি। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারের জন্য ১৯ হাজার পরিবারকে রিং-স্ল্যাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ের ওপর ৫০ হাজার পরিবারের সঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে ২ হাজার একশত পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে দুই হাজার তিনশত লোক কাজ করেছিলেন। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৬৫ জন। এখন ঢাকায়ও চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম। সেখানে রয়েছে আমাদের লোকবল। ঢাকায় বেকারদের পেশাভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- সেলাই প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডি ক্রাফট, বিউটি ফিকেশন, মেকানিক্যাল ইত্যাদি। আমাদের সংস্থা থেকে বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্তত নয়শত নারী-পুরুষের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে ভোলা ও চরফ্যাশন উপজেলায় ঝরে পড়া শিশুদের জন্য ১৪০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে চার হাজার ১৩৭ জন শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো. ইউনুছ জানান, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা বর্তমানে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। আমরা বিভিন্ন দুযোর্গকালীন সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ ধারা সব সময় অব্যাহত থাকবে। দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির মাধ্যমে সমাজের অসহায় মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করায় অনেক সংগঠনের পক্ষ থেকে সংস্থার কর্ণধার হিসেবে আমাকে সম্মাননা স্বরূপ বিভিন্ন পদকও দেওয়া হয়েছে। দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালকের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়েছে লালমোহন উপজেলা বিআরডির চেয়ারম্যান হিসেবেও। আমার লক্ষ্য মানুষের সেবা করা। দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির মাধ্যমে আমি তা করে যাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এভাবেই অসহায় মানুষের পাশে থাকবো।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর