• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

রামেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতিতে রোগীদের দুর্ভোগ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪  

ভাতা বৃদ্ধি এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৪ দফা দাবিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতি চলছে টানা চার দিন ধরে। এতে ব্যাহত হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমবিবিএস শেষ করে প্রায় ২৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আরও প্রায় ৬০ জন এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্সের চিকিৎসকরা গত রোববার থেকে কর্ম বিরতিতে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ছে। ওয়ার্ডের সিনিয়র চিকিৎসক এবং নার্সদের ওপর যেমন চাপ বেড়েছে, তেমনি চরম অবহেলা ও দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন রোগীরা। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে নেই। মেডিকেল কলেজের প্রভাষক পর্যায়ের চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এসব চিকিৎসকরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত থাকছেন। আবার রাতে ১০টার দিকে একবার এসে আবারও চলে যান। শিশু ওয়ার্ড, সার্জারি ও গাইনি ওয়ার্ডে একজন করে ডাক্তার রাত ১০টা পর্যন্ত থাকছেন বলে জানা গেছে। বাকি সময় মুঠোফোনে চিকিৎসা দিচ্ছেন নার্সরা। রোগীরা বলছেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডে চিকিৎসক থাকেন। কিন্তু বিকালের পর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই চিকিৎসক শূন্য। বিকালের পর হঠাৎ করে কোনো রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নার্স ও সহকারী রেজিস্ট্রাররা সিনিয়র চিকিৎসকদের ফোন দিয়ে পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা নার্সরাই দিচ্ছেন। ৩২ নম্বর কার্ডিওলজি বিভাগের বারান্দায় কাতরাচ্ছিলেন এক রোগী। ওই রোগীর স্বজন সুমী রানী জানান, তারা বুধবার রাতে রোগী নিয়ে এসেছেন। সে সময় চিকিৎসক ছিলেন না। নার্সরাই প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে চিকিৎসক এসে ওষুধ লিখে দেন। এর মধ্যে কয়েকবার গিয়েছি। চিকিৎসক নেই। এখন নার্সরাই দেখে ওষুধ দিয়ে যাচ্ছেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন আনারুল ইসলাম বলেন, সকালে চিকিৎসক থাকছেন। কিন্তু দুপুরের পর থাকছেন না। নার্সরাই ওষুধপত্র দিচ্ছেন। কারো সমস্যা হলে তখন ফোন দিচ্ছেন চিকিৎসককে। হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া একজন স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ওয়ার্ডে সবসময় একজন চিকিৎসক থাকেন। কিন্তু একজন চিকিৎসক এতোগুলো রোগীকে ম্যানেজ করা কষ্টকর হয়ে যায়। এতে রোগীদের প্রয়োজনে সাড়া দিতে একটু সময় লাগছে। আর এখন এক শিফটের পরিবর্তে দুই শিফট কাজ করা লাগছে। সবাই চাপে পড়েছেন। এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতিতে থাকবেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক গৌরব সাহা বলেন, এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। তারা এই মাসিক ভাতা বাড়ানোর দাবি তোলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা ২৫ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এখন মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা পান। এটি দ্বিগুণ করাসহ চিকিৎসক সুরক্ষা আইনের দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ। এ বিষয়ে তিনি জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন জনবল নেই। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে। তবে জরুরি জায়গাগুলোতে জনবল ম্যানেজ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিনিয়র চিকিৎসকদের রাখা হয়েছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর