• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২৩  

প্রস্তর ও ধাতব প্রত্ন-ভাস্কর্য, মুদ্রা, পাণ্ডুলিপি, টেরাকোটা, ধাতবসামগ্রীসহ শিলালিপির এক সমৃদ্ধ সম্ভার রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। প্রতিবছরই সংগ্রহে নতুন নতুন প্রত্ন নিদর্শনযুক্ত হচ্ছে। গবেষণারও একটি উর্বরক্ষেত্র এ জাদুঘর। এখানে সংগ্রহশালা দেশের বাইরের গবেষকদেরও আকৃষ্ট করছে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর দেশের প্রাচীনতম সংগ্রহশালা। এখানে সুপ্রাচীন শৈল্পিক বেশকিছু নিদর্শন আছে, যা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই বলেও জানান গবেষকরা।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, প্রায় ১৫০০ বছরের প্রাচীন প্রস্তর ও ধাতব প্রত্ন নিদর্শন, ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পূর্ব এবং মুসলিম ও প্রাক-মুসলিম যুগের বিভিন্ন শ্রেণির ধাতব মুদ্রা, হাজার বছরের প্রাচীন পুথি সাহিত্যের পাণ্ডুলিপিসহ পোড়া মাটির টেরাকোটা নিয়ে সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর এটি। এখানে সব মিলিয়ে প্রায় ১৭-১৯ হাজারের মতো প্রত্ননিদর্শন রয়েছে। যার পরতে পরতে গবেষণার বিষয়বস্তু লুকিয়ে আছে।

তথ্য বলছে, বরেন্দ্র জাদুঘরে প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো প্রায় ২ হাজার টেরাকোটা, স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা ও মিশ্র ধাতুতে তৈরি মুদ্রা আছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের মতো। প্রায় ৬ হাজারের মতো বিভিন্ন ভাষায় প্রাচীন পুথি সাহিত্যের পাণ্ডুলিপি রয়েছে। জায়গা সংকটের কারণে জাদুঘরের ১১টি গ্যালারিতে মাত্র ১১০০ প্রত্ননিদর্শন প্রদর্শন করা হয়েছে। বাকিগুলো জাদুঘরের পাঁচটি গুদামে তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে নিয়মিতই সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, ভেতরের বারান্দা থেকে শুরু করে প্রতিটি গ্যালারিতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রাখা হয়েছে। বারান্দায় বেশকিছু মূর্তি ও শৈল্পিক নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা সেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তবে জাদুঘরের ভেতরের দৃশ্য ধারণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত এই গবেষণা জাদুঘরে বর্তমানে দেশের অভ্যান্তরের কেউ গবেষণা করছেন না। তবে মাঝে মধ্যেই দেশের বাইরে থেকে গবেষকরা জাদুঘর দর্শনে আসেন। আর প্রাক্তন পরিচালকের সময় বেশকিছু গবেষণা কাজ হয়েছে বলে জানান বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উপ-প্রধান সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস।

তিনি জানান, অধ্যাপক আলী রেজা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ অবসর নেয়ার পর নতুন করে কোনো পরিচালক নিয়োগ হয়নি। তবে বর্তমানে তিনিই জাদুঘরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাদুঘরটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহ করে আসছে। তবে এখন জায়গার সমস্যার কারণে সব নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করা যাচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, জাদুঘরের প্রতিটি পরতে পরতে গবেষণার বিষয় আছে। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার প্রতি আগ্রহ আশঙ্কাজনকভাবে কম। এ ক্ষেত্রে গবেষণা করে, পড়াশোনা করে কর্মক্ষেত্র কোথায় হবে, এ চিন্তা থেকে অনেকেই গবেষণায় আগ্রহ হন না। তবে আশার কথা, কিছু কিছু ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। প্রত্নতত্ত্বকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

উল্লেখ্য, প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ সংরক্ষণাগার এ জাদুঘরের সূচনা ঘটে ১৯১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দুই বাংলার ইতিহাসে এ সমিতিই প্রথম জাদুঘর কার্যক্রম শুরু করে। ১৯১৪ সালে এই সমিতিকে ‘১৮৬০ সালের ভারতীয় সমিতি আইন’ অনুযায়ী নিবন্ধন করা হয়।

দেশের তিন কৃতি সন্তান দয়ারামপুরের জমিদার প্রত্ন অনুরাগী শরৎকুমার রায়, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং খ্যাতনামা নৃতত্ত্ববিদ ও শিক্ষাবিদ রমাপ্রসাদ চন্দ্রের উদ্যোগে এই অনুসন্ধান সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলার তখনকার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। নির্মাণ শেষে ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর এর দ্বার উন্মোচন করেন লর্ড রোনান্ডসে। এরপর জাদুঘর ও সমিতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য ১৯৩৭ সালের ৬ নভেম্বর আধা-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হতে থাকে।

১৯৪৭ সালের পরে জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকিয়ে রাখা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে উন্নয়ন ঘটাতে ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর থেকে এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর