• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, অপরাধ বেড়েছে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  

বাংলাদেশ পুলিশ বলছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি, মানবপাচার ও মাদক ব্যবসা বেড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ৩১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ক্যাম্পে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাসহ এতজনের মৃত্যুর ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মনে আশঙ্কা জন্মেছে। একদিকে ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীদের প্রভাব বাড়ছে, অন্যদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহিংসতা কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ‘বাংলাদেশ ছেড়ে অনেক রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণ সাগরযাত্রায় যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ।’ বলে রয়টার্সকে জানান তিনি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০২০ সালে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ৩৪৮ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। গতবছর ৩ হাজার ৫৪৫ জন রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়েছেন বা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ২০২১ সালে সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৭০০।

২৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসমাইল রয়টার্সকে জানান, গতবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে বন্দুকধারীদের হাতে তার চার আত্মীয় মারা যান। গত সেপ্টেম্বরে একদল মুখোশধারী তাকেও অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর তার বাম হাত ও পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলে তাকে খালে ফেলে দেওয়া হয়। 

ইসমাইল জানান, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি, আরসার সদস্যরা তাকে ও তার আত্মীয়দের আরসায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু এতে সাড়া না দেওয়ায় হয়ত তাদের ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রায় এক ডজন রোহিঙ্গা রয়টার্সকে জানান, আরসার সদস্যরা বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে মানব ও মাদক পাচারসহ নানান অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।

এ ব্যাপারে আরসার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো উত্তর পায়নি রয়টার্স। তবে গত ডিসেম্বরে এক টুইটে আরসা দাবি করেছিল, তাদের কার্যক্রম শুধু মিয়ানমারে সীমাবদ্ধ।

২০২২ সালে পুলিশ ২ হাজার ৫৩১ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২২০টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ মামলার কারণ ছিল হত্যা, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, মানবপাচার ও পুলিশের ওপর হামলা।

২০২১ সালে ১ হাজার ৬২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মামলা হয়েছিল ৬৬৬টি।

বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য পুলিশের একটি বিশেষ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

তবে এ মাসেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৪০ জনের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে অভিযোগ করা হয়, ২০২০ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক আটক ও শরণার্থীদের হয়রানির সঙ্গে জড়িত।

এ ব্যাপারে জানতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে ই-মেইল করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

একটি এনজিওতে চাকরি করা বার্মা ভাষার শিক্ষক ২৫ বছর বয়সী খায়ের উল্লাহ বলেন, অপরাধ ছাড়াও শিক্ষা ও কাজ না থাকায় অনেক রোহিঙ্গা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ। কারণ তারা বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখাশোনা করতে পারছে না। ভবিষ্যতে সন্তান হলে তাদের কীভাবে লালনপালন করা যাবে, তা নিয়েও চিন্তিত তারা। সর্বোপরি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় হতাশ রোহিঙ্গারা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর