• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

সাগর থেকে পাইপলাইনে তেল এল ইআরএলে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৪  

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরাসরি গভীর সাগর থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) আনা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, গভীর সাগরে স্থাপিত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) থেকে প্রথমে মহেশখালী পাম্পিং স্টেশনে এবং সেখান থেকে ইআরএলে ৪০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সফলভাবে পরিবহন করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে আমদানি করা পরিশোধিত বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বড় জাহাজ থেকে ছোট ট্যাংকারে নিয়ে খালাস করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি বা বিভিন্ন স্টোরেজ ট্যাংকে নেওয়া হয়। একটি জাহাজ থেকে তেল খালাসে সময় লাগে ১১ থেকে ১৬ দিন। দীর্ঘ সময়, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় সমুদ্র থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহে এসপিএম প্রকল্প হাতে নেয় হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সময়ও বাঁচবে। ২০১৫ সালে এসপিএম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। মোট ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৮৩৪১ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কারণে খরচ বেড়ে আরেকটু বাড়বে বলে মনে করছে ইআরএল কর্তৃপক্ষ। চীনের ঋণে এই প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। গত বছরের ২৬ জুন মহেশখালীর অদূরে গভীর সাগরে স্থাপিত এসপিএম ব্যবহার করে পাইপলাইনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে যায়। ৩ জুলাই ‘এমটি হোরে‘ নামক জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারমার ছড়ায় স্থাপিত ট্যাংকে তেল পরিবহনের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে পাইপলাইনে সরাসরি তেল পরিবহন কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। ত্রুটি সারানোর পর বিশেোয়িত বয়া ব্যবহার করে গত ৩ ডিসেম্বর জাহাজ থেকে ৮৩ হাজার টন ক্রুড অয়েল এবং ৭ ডিসেম্বর ৬০ হাজার টন ডিজেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে নেওয়া হয় এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনে ডিজেল পাম্প শুরু হয়। ৫ মার্চ পর্যন্ত ইস্টার্ন রিফাইনারির ট্যাংকে ৩০ হাজার টন ডিজেল পৌঁছায়। ৯ মার্চ মহেশখালি থেকে ক্রুড পাম্প করা শুরু হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ইআরএলে ৪০ হাজার টন ক্রুড অয়েল পৌঁছে ইআরএলের ট্যাংকে। মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইআরএলের রিফাইনারিতে। ইআরএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান বলেন, এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এসপিএম থেকে মহেশখালীতে এসে যেখানে পাম্প হবে, সেখানে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার একটি স্টোরেজ নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল থাকবে এক লাখ ২৫ হাজার টন। েবাকি ৭৫ হাজার টন হবে ডিজেল বা পরিশোধিত তেল। এর মানে হচ্ছে এই পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে তেলের সংরক্ষণ ক্ষমতাও বেড়েছে। বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ৫ লাখ টন সংরক্ষণ ক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল সংরক্ষণ ক্ষমতা দুই লাখ ২৫ হাজার টন। বাকিটা পরিশোধিত তেল রাখার স্টোরেজ। দেশে বিপিসি ৬০-৬৫ লাখ টন তেল আমদানি করে। এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফার্নেস তেলসহ প্রায় এক কোটি টন তেল দেশে ব্যবহৃত হয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর