• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ভিক্ষা নয়, চাকুরী চান শারিরীক প্রতিবন্ধি শাহিদা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২০  

দেওয়ানগঞ্জের সানন্দবাড়ীতে শারিরীক প্রতিবন্ধি শাহিদা  জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এপর্যন্ত এসেছে এবার চাকরি চায় সে।

 

গত ১৮ এপ্রিল প্রতিবন্ধী শাহিদা কে নিয়ে একটা প্রতিবেদন করা হয়, প্রতিবেদনটি সানন্দবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সানন্দবাড়ি হাটবাজারের ইজারাদার মোঃ রেজাউল করিম লাভলু এর সুনজরে আসলে, ১৯ এপ্রিল শাহিদার হাতে নগদ ২০০০ টাকা অনুদান তুলে দেন।

 

প্রকাশ থাকে যে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের প্রত্যান্ত গ্রাম সানন্দবাড়ী লম্বাপাড়া। একটি হত দরিদ্র পরিবার ছফর আলী তার সহধর্মীনি শামেলা বেগমকে নিয়ে চলে সংসার। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একে একে তিন সন্তান। বড় শাহিদা( ২২), বাবুল(১৮) , লাভলু (১৫)। বিধিবাম শাহিদা শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মেছে। তার ছোট ভাই বাবুল সে মানসিক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি। পিতা  ছফর আলী মৃত্যুর পর  মাতা শামেলা বেগম সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে।

 

লম্বাপাড়া গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের শারীরিক প্রতিবন্ধি শাহিদার কাঁন্নায় আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে আসছে। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে অভাব অনটন, দেখার কেহ নেই। চর আমখাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজ সেবক কেউই পার্শ্বে নেই। প্রতিবন্ধি শাহিদা পিতৃহারা উপার্জনক্ষম পরিবারের বড় মেয়ে।

 

ছোট ভাই বাবুল মানসিক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি আরেক ভাই লাভলু বিধবা মাকে নিয়ে চার সদস্যের সংসার।

 

 প্রতিবন্ধি শাহিদা সানন্দবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাশ করে। পাশ করে সে বসে নেই। তার আশা আকাঙ্খা  আরো লেখাপড়া করবে। কিন্ত এই অভাবী সংসারে লেখা পড়া কি সম্ভব? তার মা শামেলা বেগম কষ্টকরে দুপয়সা যোগার করে অনাহারে অর্ধাহারে মেয়ের জন্য টাকা যোগার করে কাগজ কলম কিনে দিত।

 

 সানন্দবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিজুর রহমান জানান, শাহিদা লেখা পড়া, পরীক্ষা ফরম ফেলাব করার সময় শিক্ষকরা সহযোগিতা করেছে।

 

 

শাহিদার সংগ্রাম থেমে নেই, সে গরীব হলেও তার মনের আশা আকাঙ্খা ছিল অনেক বড়। সে সানন্দবাড়ী ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচ এসসি ও ২০১৭ সালে ডিগ্রী পাশ করেন।

 

প্রতিবন্ধী শাহিদাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য কলেজে অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম সহ শিক্ষকগন উৎসাহ দিয়েছেন।

 

২০১৭ সালে বিএ পাশ করে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য শাহিদা ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষন করেন।

 

 শাহিদা আরো জানায় আমি  বাড়ীর সামনে রাস্তার সাথে ছোট দোকান দিছি। অতি কষ্টে কোনরকমে  কম্পিউটারের কাজ করি।

বর্তমান করোনাভাইরাসের কারনে লকডাউনের জন্য দোকান বন্ধ। এখন আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বড়ই কষ্টে দিন যাপন করছি। কোন বিষয় জানতে চাইলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে, বৃষ্টির ফোটার মত চোখে জল গড়িয়ে পড়লো।

 

সে বলে নির্বাচনের সময় সব প্রার্থী এসে বলেন, আপনারা আমাদের ভোটার,  ভোট দেন। পরে দেখবো। নির্বাচনের পরে আর কেহ খোজ খবর নেয়না।

প্রতিবন্ধী শাহিদা আরো বলেন, আমি হাটতে পারি না, কিছু ধরতে পারি না। লেখা পড়া করার জন্য মানুষের দ্বারে হাত পাততে পারি না।

 

শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা আক্তার বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে বিএ পাশ করেছি, ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ করেছি, আমি কেন মানুষের দান দক্ষিণা ও অনুদান নিয়ে খাবো? চাকুরী করার মতো আমার কি যোগ্যতা নেই? অনেক স্বল্প শিক্ষিত লোকজনও চাকরি করে,  তবে বিএ পাস করে আমি কেন চাকরি পাবোনা? তাহলে আমি কোন দেশে বাস করি? কেমন দেশে বাসকরি? 

 

শাহিদা দুচোখের পানি ছেড়ে চিল্লায়ে বলেন- আমি ভিক্ষা চাইনা আমি একটা চাকুরী চাই, চাকুরী চাই।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর